ছোট্ট শিশু খুলনার মেয়ে মালিহা। স্কুলের গন্ডি পেরুতে এখনও অনেক দেরি। মা-বাবার উষ্ণ আদরে কাটছে তার শিশুবেলা। তবে রয়েছে প্রকৃতিপ্রদত্ত যাদুর কচিকণ্ঠ। গতকাল (১১ অক্টোবর) একরাতে সেই কণ্ঠে সুর ও লয়ের ঢেউয়ের ঝড় তুলেছিল সে। শুধু তিন বিচারক নয়, বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছে মালিহা। মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের চতুর্থ আসরের মুকট সুভা পেয়েছে তারই মাথায়। ঝলমলে মুকুটের পাশাপাশি তার হাতে দেওয়া হয়েছে নগদ পাঁচ লাখ টাকার পুরস্কারের অর্থমূল্য। সেই সঙ্গে ছিল ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ বছরের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতাল ও গ্রীণলাইফ হসপিটালের সৌজন্যে স্কুলজীবন পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা।
প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়েছে নেত্রকোনার ছেলে সজীব। পুরস্কার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় তিন লাখ টাকা। দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছে খুলনার রাতুল। তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নগদ ২ লাখ টাকা। তারাও পাচ্ছে শিক্ষাবৃত্তি ও চিকিৎসাসেবার সুযোগ। চূড়ান্ত পর্বের অপর দুই প্রতিযোগি রাইসা ও সুবর্ণা। আনন্দে আপুত মালিহা সকলের কাছে ছোট্ট আবদার করে জানিয়ে বলেন, ‘গান নিয়ে আমি যেতে চাই অনেক দূর। বিজয়ীদের ইমপ্রেস অডিও ভিশন থেকে সিডি/ডিভিডি, আনন্দ আলোতে নিয়মিত কাভারেজ এবং চ্যানেল আইয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তো অংশগ্রহণের সুযোগ।’
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন তানিশা। পরিচালনা করেন ইজাজ খান স্বপন।
ক্ষুদে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক আবদুর রশিদ মজুমদার, মুকিত মজুমদার বাবু, জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, মেরিডিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম কামাল পাশা ও চেয়ারম্যান কোহিনূর কামাল। এ সময় প্রতিযোগিতার প্রধান দুই বিচারক ফেরদৌস আরা ও এসআই টুটুল এবং অতিথি বিচারক শাহনাজ রহমতউলাহ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরু যেভাবে: হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা। মুহুুমুহুু করতালি। আনন্দ উলাসের মধ্য দিয়ে মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ চতুর্থ আসরের মহাউৎসব ২০১৩ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে। সন্ধ্যে সাড়ে ৭টায় নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুদের অংশগ্রহণে- আজ যে শিশু পৃথিবীর আলো দেখেছে… গানটির সাথে পথশিশুদেও নৃত্যপরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।
এরপর মঞ্চে আসে গত তিন আসরের মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ রানা, রাফি, মুন্না, পায়েল, নীলা, আশা ও মামুন এবং এ বছরের প্রতিযোগী শান্তা, সিতাব, অমি। সমবেত কণ্ঠে তারা পরিবেশন করে- আজ কিছু চাইনা মনে গান ছাড়া… গানটি। এরপর ছিল ফেলে প্রতিযোগিতার অতীত স্মৃতি ফিওে দেখা ১০ মিনিটের তথ্যচিত্র। সেখানে তুলে ধরা হয় ক্ষুদে গানরাজের স্মরণীয় কিছু মুর্হূত। মঞ্চে আসে ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেলের ছয় সুন্দরী-সামিয়া, আশা, জেরিন, নুমিয়া, তানিয়া ও নওশীন। পপ তারকা প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনের একটি গানের সঙ্গে নাচ পরিবশেন কওে তারা দর্শক-শ্রোতাদের মন রাঙাতে পেরেছে উপস্থিত দর্শকদের করতালিতে তা প্রমাণিত হয়েছে।
মহোৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ক্ষুদে গানরাজের প্রধান বিচারক ফেরদৌস আরা ও এসআই টুটুল এবং অতিথি বিচারক শাহনাজ রহমতউলাহকে। তাদের সঙ্গে একদল শিশুর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ছিলো বেশ উপভোগ্য।
এর পর ছিল ক্ষুদে গানরাজের স্মরণ, ঝুমা এবং প্রান্তির পরিবেশনা। চ্যানেল আইতে প্রচারিত ‘ছোটকাকু’ সিরিজের ছোটকাকু আফজাল হোসেনের সঙ্গে ছিল ক্ষুদে গানরাজদের একটি চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর পর্ব। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে পাঁচ ফাইনালিস্ট-রাতুল, মালিহা, রাইসা, সুবর্ণা ও সজীব। তারপর শুরু হয় পাঁচ প্রতিযোগির একক গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা্ এসময় চলতে থাকে এসএমএস কাউন্ট পর্ব। ‘চেয়ো না চেয়েরা সুনয়না এই নয়ন পানে’ গানের সঙ্গে চমৎকার একটি কোরিওগ্রাফিতে অংশ নেন নায়ক ফেরদৌস ও নবাগত নায়িকা শায়লা সাবি।
মাহেন্দ্রক্ষণের আগে প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতির উদ্দেশে ‘শুয়া উঁড়িল শুয়া উঁড়িল’ গানটি পরিবেশন করেন এসআই টুটুল।
সেরা নাচিয়ে: ক্ষুদে গানরাজের মহাউৎসব চলাকালে ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’র পরবর্তী কার্যক্রম। তিনি জানান, সেরা নাচিয়ে শো’র বিচারকের আসনে এবার বসবেন মেহের আফরোজ শাওন, মুনমুন আহমেদ ও ফেরদৌস। এ সময় মঞ্চে তিন বিচারক উপস্থিত ছিলেন।