পূর্বকোণ রিপোর্ট
আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে জটিলতায় পড়বে জোট ও মহাজোট। তাদের শরিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে মনোনয়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে জোর লবিং করছেন এখন থেকেই। অবশ্য, এদের মধ্যে কারও কারও মনোনয়ন প্রাপ্তি একেবারে নিশ্চিত বলে চাউর হয়েছে। জোটগত নির্বাচনের সম্ভাবনায় বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। কারণ জোটের, আসন দাবির কারণে তাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে তাদের কেউ কেউ জানিয়ে দিয়েছেন যে তাদেরকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হলে নির্বাচনে জোট প্রার্থীর পক্ষে তারা কাজ করবেন না। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রী, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, বর্তমান সাংসদ জাসদের মইনুদ্দিন খান (বাদল), বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে এলডিপি’র সভাপতি ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন (সেলিম), জামায়াতের সাংসদ মওলানা শামসুল ইসলাম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। হেফাজত নির্বাচন করলে তাদের নায়েবে আমীর ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় পার্টি বিএনপি জোটে গেলে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন।
চট্টগ্রামে দুই জোটের মধ্যে অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে সংকট হবে তুলনামূলকভাবে কম। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে পড়তে হবে অধিকতর সমস্যায় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে। বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কেবল মাত্র সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল শরিক দল জামায়াতকে। আর সব আসনে তাদের প্রার্থী ছিলেন। গতবার একটি মাত্র আসন শরিক দলকে ছেড়ে দিলেও এবারে পরিস্থিতি ভিন্ন। আরও বেশি সংখ্যক আসন শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ছেড়ে দিতে হতে পারে।
আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম-৮ এবং হাটহাজারী আসন ছেড়ে দিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও আংশিক এবং বোয়ালখালী আসন ছেড়ে দিয়েছিল জাসদের কার্যকরি সভাপতি মইনুদ্দিন খান (বাদল)কে। এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলিও ছিলেন মহাজোটের সাথে। তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন চন্দনাইশ সাতকানিয়া ( আংশিক) আসন থেকে। ছাতা প্রতীক নিয়ে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া (আংশিক) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পান। এবারে তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে জোটের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন। বিএনপি প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান এবং মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ধরাশায়ী হন। হাটহাজারী আসনে জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও আংশিক এবং বোয়ালখালী আসনে জাসদের মইনুদ্দিন খান (বাদল) জয়ী হন। এবারে জাতীয় পার্টি মহাজোটে না থাকলে আওয়ামী লীগ নিজস্ব প্রার্থী দেবে হাটহাজারী আসনে। তাছাড়া, ডা. আফছারুল আমীনের আসনে শরিক দল নিয়ে কোনো সংকট থাকবে না। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া মনোনয়ন চাইতে পারেন মিরেরসরাই আসনে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শরিক দল জামায়াতের ঘাঁটি লোহাগাড়া- সাতকানিয়া (আংশিক ) আসন। এই আসনটি তাদের। বর্তমানে তাদের মওলানা শামসুল ইসলাম এখানকার সাংসদ। জামায়াতের প্রাক্তন সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীও চান এবারে নির্বাচন করতে। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে বিরোধ চরমে। এলডিপি সভাপতি ড. অলি আহমেদ বীর বিক্রম তার নিজ আসন চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) ছাড়াও আরও আসনে জোটের মনোনয়ন চাইবেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বন্দর পতেঙ্গা আসনে জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঈদ উপলক্ষে এই আসনের সর্বত্র তিনি ব্যাপক পোস্টারিং করে মনোনয়ন চাওয়ার সম্ভাবনা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। তবে, লক্ষ্মীপুর-১ আসনেই নির্বাচন করার সম্ভাবনা প্রবল বলে তার ঘনিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। বিএনপি জোটের জন্য সবচেয়ে জটিল অবস্থা হবে হাটহাজারিতে। সেখানে তাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী। এ আসনে বিএনপির ৩ বারের বিজয়ী এমপি সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। এলাকায় তার দীর্ঘদিনের আধিপত্য। সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ছাড়াও মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন, এস এম ফজলুল হক বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। গত নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসের কাছে হেরে যান সৈয়দ ওয়াহিদ। জাতীয় পার্টি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে গেলে হাটহাজারিতে জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসকে নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম এখানে সক্রিয়। জোট প্রধানের সিগন্যাল পেয়ে তিনি এখানে ব্যাপক জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
জোটকে সংকটে পড়তে হবে বাঁশখালি নিয়েও। হেফাজত যদি এই জোটে নির্বাচন করে তাহলে হেফাজতের নায়েবে আমীর ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন। অপরদিকে, জাতীয় পার্টিও যদি এই জোটে যায় তাহলে প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী হবেন এই আসনের অন্যতম দাবিদার। এখানে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রভাব প্রচুর। উল্লেখ্য, বাঁশখালি আসনটি বিএনপির। সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এখানকার জনপ্রিয় সাংসদ। এই আসনে তাঁকে কেউ হারাতে পারেননি এ পর্যন্ত।