নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারকে আজ শনিবার পর্যন্ত দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এই দু’দিনের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ না নিলে প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৭ অক্টোবর রোববার ভোর ৬টা থেকে ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে বিরতিহীনভাবে ৬০ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হবে।
তিনি বলেন, এখনও সময় আছে আমাদের প্রস্তাব মেনে নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিন। আমরা এখনও আলোচনার পথ খোলা রেখেছি। সাড়া না দিলে এটাও বন্ধ হয়ে যাবে। কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলীয় জোটের বিশাল জনসমুদ্রে তিনি এসব কথা বলেন।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, ২৭ অক্টোবর থেকে এই সরকারের বৈধতা শেষ। এ সরকারের মেয়াদ নেই। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আর দু’দিন আপনাদের সময় দেবো। আজ-কালের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা না করলে স্ট্রেইটকাট কর্মসূচিতে চলে যেতে হবে। এরপরও যদি সরকারের বোধোদয় না হয়, পরবর্তীতে আরও কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারকে বলব, আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ক্ষমতার দম্ভ পরিহার করুন। জনগণের কাতারে নেমে আসুন। আলোচনার বসুন। অন্যথায় সরকারের সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনকে হুশিয়ারি জানিয়ে বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন কমিশন একদলীয় নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে এর ফল শুভ হবে না।
আলোচনার পাশাপাশি সরকার হটানোর আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ইনশাআল্লাহ আবার দেখা হবে রাস্তায়। দেশ রক্ষা ও দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের মা-ভাইবোন, যুবক-যুবতী, মুরুব্বিয়ান, নারী-পুরুষ সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। সরকারের অন্যায় কাজ করলে তার জবাব দিতে হবে। জয় আমাদের সুনিশ্চিত। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমেই আগামী ১৮ দলীয় জোট সরকার গঠন করবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিকালে ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে এ জনসভা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্যের মাঝপথে আন্দোলন-কর্মসূচির প্রসঙ্গ উঠে এলে সমাবেশের সামনের সারি থেকে নেতাকর্মীরা ‘হরতাল’, ‘হরতাল’ বলে কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানাতে থাকেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২৭ তারিখ থেকে সরকারের বৈধতা শেষ। আপনারা নিশ্চয়ই চান আমরা কর্মসূচি দিই। আগে বক্তব্য। পরে কর্মসূচি। তবে শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের দাবি মেনেই হরতালের ঘোষণা দেন তিনি।
জনসভার কার্যক্রম শুরু হয় বেলা ২টা ১৫ মিনিটে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে জনসভার মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ হয় জুমার নামাজের পর। সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দীতে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন।
বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় করতালি ও স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা। বিরোধীদলীয় নেতা মঞ্চে উপস্থিত হলে ১৮ দলীয় জোট নেতা ও লাখো জনতা তাকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় হাত নেড়ে তিনি জনতার শুভেচ্ছার জবাব দেন। প্রায় ৩০ মিনিটের বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দলীয়করণ, অপশাসনসহ নানা বিষয়ে তুলে ধরেন।
নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহানগর পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি দিলেও প্রথমে বিএনপি নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনেই জনসভা করার ব্যাপারে তাদের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এরপর গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে রাতে সাড়ে ১০টায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোহরাওয়ার্দীতে জনসভা করার কথা ঘোষণা করেন। ফলে কম সময়ের মধ্যে বিএনপিকে জনসভার প্রস্তুতি শুরু করতে হয়।
বেলা ৩টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মঞ্চের আশপাশ এবং মত্স্যভবন-শাহবাগ-হাইকোর্ট সড়কে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জনসভাটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়। জনসভা উপলক্ষে উদ্যানের চারপাশে পুলিশ-র্যাবের ব্যাপক নিরাপত্তা ছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশের মাঠে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ব্যাপক শোডাউন করে। সমাবেশস্থলের অধিকাংশ জায়গাই ছিল তাদের দখলে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কয়েকটি স্থানে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবি সম্বলিত ব্যানার টানানো হয়। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবি সম্বলিত বড় আকারের চারটি বেলুন ওড়ানো হয়।
নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব মেনে নিন :
বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আমি যে প্রস্তাব দিয়েছি, তাতে সামান্য সংশোধনী লাগবে। আমি বন্ধু হিসেবে আপনাকে বলছি, আসুন একসঙ্গে সংবিধান সংশোধন করি। সোজা পথে আসুন। নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব মেনে নিয়ে নির্বাচন দিন। নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
১৮ অক্টোবর জাতীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভাষণের দুই দিন পর গত শুক্রবার গুলশানের একটি পাঁচতারা হোটেলে সংবাদসম্মেলন করে নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব দেন বিরোধীদলীয় নেতা। ওই প্রস্তাবে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ উপদেষ্টা থেকে দুই দলকে ৫ জন করে উপদেষ্টা মনোনয়ন দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেন। একই সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশের একজন সম্মানিত নাগরিককে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দেন তিনি।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, অনেক নির্যাতন করেছেন। অনেক হয়েছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আমরা দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা বলেছি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চাই। শেখ হাসিনার অধীনে এদেশে নির্বাচন হবে না।
নিজের দেয়া প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, তা গ্রহণ করতে হবে। আপনাদের কথায় তা সংসদেও উত্থাপন করেছি। আমাদের মহাসচিব চিঠি দিয়ে আলোচনার কথা বলেছেন। কিন্তু সরকারের সেদিকে কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার র্যাব, পুলিশ, বিডিআর (বিজিবি) দিয়ে একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। এটা করতে দেয়া হবে না। সরকার সব সময় বলে থাকে, তারা দেশে অনেক উন্নয়ন করেছে। দেশের জন্য যদি ভালো কাজ করেই থাকে, তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে এসে নির্বাচন দিন। কিন্তু সরকারের সেই সাহস নেই। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। অথচ তারাই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। গান পাউডার দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। তারপরেও তারা গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে। এটা তাদের মুখে মানায় না।
নৌকার তলা ফুটা হয়ে গেছে : তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে ঘুরে রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি জানেন, নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে। পানি ঢুকে গেছে। অনেকে লাফিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন বাড়াবাড়ি করলে ফল ভালো হবে না :
নির্বাচন কমিশনের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, কমিশনকে বলতে চাই, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। বর্তমান ইলেকশন কমিশন যদি বাড়াবাড়ি করে, তার ফল শুভ হবে না। তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। একদলীয় নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। একদলীয় নির্বাচন হলে পুলিশ প্রশাসনকে তাতে সহযোগিতার না করার আহ্বান জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশদের বলব, এই অবৈধ সরকারকে আর সহযোগিতা করবেন না। নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেফতার বন্ধ করুন। ২৭ তারিখের পর থেকে অবৈধ সরকারের নির্দেশে দলীয় কর্মী হয়ে কারও ওপর নির্যাতন করা হলে এর দায়-দায়িত্ব আপনাদের (পুলিশ-র্যাব-বিজিবি) ওপর বর্তাবে। কোনো দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। তা না হলে সে নির্বাচনে কোনো বাহাদুরি নেই।
সব অসাংবিধানিক সরকারের পেছনে ভূমিকা ছিল আ.লীগের :
অতীতের বিভিন্ন সময়ে অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার আনার পেছনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ও সমর্থন ছিল বলে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি মইন-ফখরুদ্দীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন। অতীতের সব অসাংবিধানিক অবৈধ সরকার আপনারাই ডেকে এনেছেন। এসব পথ বন্ধ করুন। যে গর্ত আপনি খুঁড়েছেন, তাতে আপনিই পড়বেন। তাই বলব, সোজা পথে চলুন।
সাংবাদিক নির্যাতন : বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যে সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টিও উঠে আসে। তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ সরকারের আমলে ২০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তারা সাগর-রুনির হত্যার বিচার করতে পারেনি। সাগর-রুনি হত্যার পেছনে ছিল তাদের ল্যাপটপ। কারণ ওই ল্যাপটপে সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ ছিল।
সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি, নির্যাতন :
১৮ দলীয় জোট নেতা তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে বলেন, সরকার বলে তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এত উন্নয়নই যদি করে থাকেন তাহলে পদ্মা সেতু হলো না কেন—প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে ডেসটিনি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, পুঁজিবাজার, পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্প প্রভৃতি খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে গত ৫ বছর সরকার কুইক মানি লুটপাট করেছে। মানুষের বিদ্যুত্ সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। পোশাক শিল্পের অরাজক পরিস্থিতি ও সাভারের রানা প্লাজার ঘটনার জন্য সরকারকেই দায়ী করেন তিনি। তিনি বলেন, রানা প্লাজার মালিক এখন কারাগারে জামাই আদরে আছে। মুরাদ জং এখনও গ্রেফতার হয়নি। রানা প্লাজা ধস, ভবনের মালিক সোহেল রানা ও তার সঙ্গে এমপি মুরাদ জংয়ের সখ্যের কথা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি জনগণের কাছে প্রশ্ন তুলে বলেন, রানা কার লোক? মুরাদ জং কার লোক? বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরলেও ওই দিন জবরদস্তি করে শ্রমিকদের কারখানায় কাজ করানো হয়। তারপর তারা মারা যায়। এটাই সবচেয়ে বড় মানবাধিকার বিরোধী কাজ।
আইনজীবীদের ওপর সরকারের নির্যাতন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী গুম নিখোঁজ ও হত্যার জন্য সরকারকে দায়ী করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে আটক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, টুকুকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে, সে আজ পঙ্গু হওয়ার মতো। ছাত্রশিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু করা হয়েছে।
সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে :
জনপ্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সব প্রতিষ্ঠানে সরকারের দলীয়করণে সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা (সরকার) দেশে অঘোষিত বাকশল কায়েম করেছে। সরকার নিজেই অবৈধ হয়ে আছে। তারা সারাদেশকে আজ অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। ১৪৪ ধারা জারি করে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে নিজেরাই দেশকে অবরোধ করে ফেলেছে। তারা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ২৫ অক্টোবর উপলক্ষে সারাদেশে ধরপাকড়ের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সরকার অবৈধ। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী তিনি ও তার মন্ত্রীরা। তারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবেন। পত্রিকায় দেখলাম জামালপুরের ডিসি নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। নির্বাচনে ভরাডুবি হবে বলে তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট চাচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, তাদের বলবো, দেশকে ভালোবাসেন। দেশের প্রতি, সরকারের প্রতি দায়িত্ব পালন করেন। অন্যায়ভাবে কারও ওপর গুলি করবেন না।
ক্ষমতায় গেলে দলীয়করণ নয়, যোগ্য-মেধাবীরা অগ্রাধিকার পাবে :
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দলীকরণ করবে না বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, দলীয়করণে ব্যক্তি ও দলের উপকার হয়, দেশের কোনো লাভ হয় না। আমরা দলীয়করণ করবো না। জনগণের জন্য কাজ করবো। তারা পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব জায়গায় দলীয়করণ করেছে। যেমন লুটপাট করেছে তেমনি দলীয়করণও করেছে। যোগ্য অফিসারদের ওএসডি করেছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে দলীয়করণ এবং ওএসডি নয়, যোগ্য ও মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
ড. ইউনূসকে অসম্মান করা হচ্ছে :
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৪ লাখ নারী কাজ করেন। এ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে সরকার মানুষকে গরিব বানাতে চায়। অধ্যাপক ইউনূসকে অসম্মান করা হচ্ছে। তারা (সরকার) মানুষকে সম্মান দিতে জানে না। বাংলাদেশের মানুষও তাদের সম্মান দেবে না।
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিচার করা হয়নি। আপনি আমি বলে কিছু নেই, যে অপরাধী তার বিচার হতে হবে এবং বিচার করা হবে।
রাজনৈতিক দলের অফিস বন্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি? যেখানে বিএনপি-জামায়াতের অফিস দিনের পর দিন তালাবদ্ধ। সরকার যদি ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রাখতে পারে তাহলে আমরা কেন অবৈধ সরকারের সময়ে অবরোধ করতে পারব না। সরকার সারাদেশে অঘোষিত বাকশাল কায়েম করছে। এ সরকার একদলীয় শাসন কায়েম করে সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মকবুল আহমাদ, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহ মোয়াজ্জেম, শামসুজ্জামান দুুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু এমপি, মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জমিয়তে উলামায় ইসলামের মহাসচিব মহিউদ্দিন একরাম, এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মুর্তুজা, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মো. ইজ্জাত উল্লাহ, শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম, জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কর্মপরিষদ সদস্য মুঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম।