অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বক্তব্যে সরকারের ভেতরে ‘ভূকম্পন’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান।
প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের ‘সবকিছুই অবৈধ হয়ে গেছে’ বলে দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। তিনি সাহস করে তার ওপরে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, সেই দায়িত্বটা মনে করে, বিচারের কথা মনে করে সত্য কথা বলেছেন। তার ওই বক্তব্য সরকারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তার ওই বক্তব্যে সরকারের মধ্যে ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছে।”
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে গত বুধবার এক বাণীতে বিচারপতি সিনহা বলেন, অবসরের পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থি’।
তার ওই বক্তব্য ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের যে রায় লিখেছিলেন, তা বর্তমান প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী অবৈধ হয়ে গেছে। আর ওই রায়ের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়েছিল- তাও বৈধতা হারিয়েছে।
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জিয়া নাগরিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফোরাম আয়োজিত এ আলোচনা সভায় মাহবুবুর রহমান বলেন, “কিছুদিন আগে একটা ভূকম্পন আমরা দেখেছি- সব কিছু নড়ে যায়। অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা নিয়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যেও সরকারের মধ্যে আরেকটা ভূকম্পন সৃষ্টি করল।”
এই বিএনপি নেতা বলেন, “বিচার বিভাগের শীর্ষে বসে আছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। যখন তিনি ওই বক্তব্য দেন… তখন আমরা যেটার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন করলাম, যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে নির্বাচন হলো, সেটা তো অবৈধ। আমি তো মনে করি, সরকার যে সংসদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সরকার সবই অবৈধ হয়ে গেছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘প্রহসন নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে দেশে ‘গণতন্ত্রের সংকট’ চলছে বলে মন্তব্য করেন ওই নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাহবুবুর বলেন, “বাংলাদেশ গণতন্ত্রের স্বাদ হারিয়ে ফেলেছে। এদেশ সত্যি অবরুদ্ধ। এদেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।”
“সরকার যুক্তি দিতে চায়, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র- এটা একেবারেই মিথ্যা কথা। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন চোরাবালির মতো ভিত্তিহীন।”
বিএনপিকে ভাঙার বিষয়ে বিভিন্ন খবরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই, বিএনপি ভাঙার দল নয়। এই দল ভাঙতে পারে না। এই দল অমর ও অক্ষয়”।
সভায় প্রধান বিচারপতি ‘সত্য কথা বলেছেন’ মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “পাকিস্তানের কাছে আমরা ছোট হয়ে যাচ্ছিলাম না। সেদেশের বিচার বিভাগ কথা বলে সেটা প্রমাণ করেছে। আর আমরা বিচার বিভাগকে কিভাবে বির্তকে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটা করেছি।
”কিন্তু এস কে সিনহা সাহেব একেবারে বাঘের বাচ্চার মতো সত্য কথাটা বলেছেন। আমি তাকে অনুরোধ করব-নিয়ম প্রতিষ্ঠা করার জন্যে, সংবিধানকে রক্ষা করার জন্যে আপনি যেটা সত্য বলে জেনেছেন, তার স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বাংলার জনগণ আপনার সঙ্গে থাকবে।”
সিলেটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট চাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দুদু বলেন, “চারিদিকে কথা-বার্তা শুনা যাচ্ছে, ভোট নাকি এই বছরের মধ্যেই হবে। আমি আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই, এবছর হবে পরিবর্তনের বছর।”
২০১৬ সাল বিএনপির বছর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা।
সংঠনের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, গণশিক্ষা বিষয়ক সস্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান, আবুল কালাম আজাদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হানিফ, কল্যাণ পার্টির সহ-সভাপতি সাহিদুর রহমান তামান্নাসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।