বাংগালীর বহুল কাংখিত “প্রাক নির্বাচন সংলাপ” অবশেষে শেষ হয়েছে। একে অবশ্য সংলাপ না বলে ঢংলাপ বললেই এর যথার্থতা প্রমানিত হয়।
এই সংলাপের মাধ্যমে ঝুনা রাজনীতিবিদদের কিছু বালখিল্য আচরনের মাধ্যমে সমাজের মানুষদের কাছে নিজেদের হাস্যপদ করে তোলা ছাড়া আর কি কারো কোন লাভ হয়েছে কিনা – আমি জানিনা!
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যে ধ্বংসের প্রায় শেষ মাথায় দাড়িয়ে আছে – সেটা নিয়ে কেউ কোন কথা বলেছেন এই সংলাপে?
– না, কেউ বলেন নি একটি শব্দ!
সাগর – রুনীর হত্যাকাণ্ডের দোষী এত বছরেও ধরা পড়লো না; আপন জুয়েলার্সের মালিক ছেলে ধষ’ন কারী জেনেও- এত দিনে সেই মামলা প্রায় হিমাগারে যেতে বসেছে- সেই সাথে হিমাগারে যাচ্ছে আমাদের আইন ব্যবস্থা ও!
কেউ কি বলেছেন একটি শব্দ এ নিয়ে?
– না কেউ বলেন নি।
একটা দেশের রাজধানী ঘন্টার পর ঘন্টা স্থবির হয়ে থাকে যানজটে- আশপাশের নদী গুলো সব ভরাট হয়ে যাচ্ছে, দূসিত হয়ে যাচ্ছে – আছে কোন প্রতিকারের দীর্ঘ মেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা? কেউ কথা বলেছেন এ নিয়ে?
– না কেউ বলেনি এগুলো নিয়ে কোন কথা!
অথচ একটা ভদ্র – শিক্ষিত সমাজে এগুলো নিয়েই সংলাপ হওয়ায় কথা। দাঁড়ান, দাঁড়ান আমি জানি এটা ” নির্বাচনী সংলাপ” – এখানে নির্বাচন সংক্রান্ত আলাপ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উপরেল্লিখিত কোন প্রশ্ন ই কি কোন নেতার বাড়ি কেন সরকার নিয়ে নিলো, কার হাসপাতালে জমির ফয়সালা হয়নি, কে জান দিয়ে কোন নেত্রী কে জেল থেকে বের করে আনবেন – এগুলো থেকে কম গুরুত্বপূর্ন বিষয়?
আসলে সোজা বাংলায় বললে, এসব “সংলাপ” হলো কে ঠিক কি পরিমানে দেশ টা কে চুষে খাবে – সেই হিসাবের দেন দরবার!
আচ্ছা কি হবে যদি এখন সরকার বদলে যায়? আমুল বদলে যাবে শিক্ষাক্ষেত্র, সড়ক ব্যবস্থা, আইন – প্রশাসন – দেশের অন্যান্য ক্ষয়ে যাওয়া খাতগুলো?
মোটেই না, নাহিদ সাহেবের জায়গা নিবেন কোন জাহিদ সাহেব, যিনি ব্যস্ত থাকবেন নিজ সরকারের সাফল্য দেখাতে বেশি বেশি “আই এম জি পিএ ৫” বানাতে!
আইন ব্যবস্থার প্রশাসকেরা শুধু নাম বদলে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন, বিরোধী দলের মানুষ দিয়ে কয়েদখানা ভরতে!
তারাও গুম – লাশ- আহাজারি জাস্টিফাই করবেন তখন নিজের মতো করে, নিজেদের পক্ষ নিয়ে!
কাদের সাহেবের জায়গায় হয়তো আসবেন কোন নাদের সাহেব – একইভাবে সারা বছরই খোঁড়াখুড়ি করবেন – টেন্ডার দিবেন দেশ জুড়ে অথচ দেশবাসী বৃস্টির পানি পড়ার আগেই তলিয়ে যাবে ম্যানহোলে অথবা দীর্ঘতর জ্যামে বসে উড়াল পরিবহনের স্বপ্ন দেখবে!
কিছুদিন আগে দেখেছিলাম ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অর্থ মন্ত্রী ডেবিড মিলাব্যান্ড কে, এক রেলস্টেশনে দৌড়াচ্ছেন তার ট্রেন ধরতে! একটা সময় বিশ্বের বিশাল ক্ষমতাধর দের একজন, তার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে উনি চলে গিয়েছেন অনেকটা পর্দার আড়ালে! অথচ আমাদের দেশে যারা ক্ষমতায় যান, তারা ধরেই নেন যে – এই ক্ষমতা শুধুমাত্র “তার পরিবারের জন্য” বিশাল নেয়ামত স্বরুপ আবর্তিত হয়েছে, এটা কোন ভাবেই হাতছাড়া করা যাবেনা। তারা মাশাল্লাহ সেটা করেন ও না।
আসলে সত্যি বলতে আমাদের রাজনীতি তে গুনগত মান পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। আফসোস শুধু এই যে, এই পাকনা চুলের মানুষ গুলো ও বুঝতে পারছেনা যে, শিক্ষা এবং আইন প্রশাসন কে শক্ত করতে না পারলে সেই জাতি কোন দিন ই বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা, শুধু দলীয় তেলবাজদের হিসাবেই তারা বিশ্ব সেরা থাকবে।
দুই
মাশরাফি মনোনয়ন পত্র নিচ্ছেন নির্বাচন করবেন বলে, এতে করে আলোচনা – সমালোচনায় ফেসবুক সয়লাব; স্বভাবতই খারাপ সমালোচনার পাল্লাই ভারী। তবে সে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন নিবেন বলেই যদি সেই সমালোচনা হয়ে থাকে, সেটা পুরোই হাস্যকর ব্যাপার।
মাশরাফি নিশ্চিত ভাবে বিশ্বকাপের পর অবসরে যাবেন; হয়তো এর পরের নির্বাচনে অংশ নিলে এমন আলোচনা কম হতো কিন্তু পরের নির্বাচনের জন্য আরো ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অবসরের ৬ মাস বা ১ বছর আগে নির্বাচন করলে এতে সমস্যার ই বা কি আছে? পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গোবিন্দ কি অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন সাংসদ হয়ে? আসলে ঠিক জায়গায় ঠিক কাজটা করতে পারলে আর সমস্যা থাকেনা; যেহেতু জাতির বিশাল একটা অংশ ঠিকভাবে করতে পারিনা, তাই অন্যদের ক্ষেত্রে ও সেটা হবে বলে ধরে নেই। মাশরাফি অন্য ধাতুতে গড়া সেটা আমাদের এত দিনে বোঝা উচিত।
এই যারা বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ বলে অস্থির হয়ে আছেন, তারা হয়তো জানেন না যে,”মাশরাফি এম পি হলে আমরা বিশ্বকাপে খারাপ করবই” এমন কোন গায়েবী বার্তা এই জাতির উপর নাজীল হয়নি। যেই মানুষের পায়ের এতগুলো অপারেশন ও মনোসংযোগে চিড় ধরাতে পারেনি এত বছরে, এক নির্বাচন সে মানুষের পারফরমেন্স খারাপ করে দিবে, সেটা কোন যুক্তিযুক্ত ভাবনা হতে পারেনা।
এই যে উপরে সব বয়স্ক রাজনীতিবিদ দের কথা বললাম, তাদের রিপ্লেস করে রিটায়ারমেন্টে পাঠানোর জন্য হলেও একদল তরুন – স্বচ্ছ ধারনা পূর্ন এবং আধুনিক মানসিকতার রাজনীতিবিদ আমাদের দরকার তার সাথে আমাদের খুবই দরকার। এর সাথে আমাদের মতো একদল আছি যারা সবসময়ই দেশের রাজনীতি নিয়ে নাক সিটকাই, দেশের সব খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করি, তাদের চুপ করানোর জন্য হলেও এমনতর আধুনিক দৃঢ় রাজনীতিবিদ দরকার।
সেই যে বলেছিলাম বর্তমান অবস্থা বদলানো “প্রায় অসম্ভব”, সেই প্রায় অসম্ভব কে সম্ভব করতে হলে মাশরাফিদের চেয়ে যোগ্য এই মূহুর্তে আর কেউ নেই।
আর ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে এই ক্ষয়ে যাওয়া রাজনীতির ভিতরে থেকেও ভালো কিছু করা সম্ভব সেটা প্রয়াত মেয়র আনিস সাহেব ই দেখিয়ে গিয়েছেন।
আর দিনশেষে এই ক্ষয়ে যাওয়া রাজনীতি যদি শুদ্ধ করতে হয় তবে তা করতে হবে রাজনীতির ভিতরে থেকেই; এই দেশের খারাপ জিনিসগুলো সারিয়ে তুলতে হবে দেশের সিস্টেমের ভিতরে থেকেই – আকাশ থেকে কোন দেবদুতেরা সেগুলো ঠিক করে যাবেনা। পুরানো তেলবাজ – দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সরিয়ে আর অভিজ্ঞ ভালো দের সাথে নিয়ে নতুন করে দেশের জন্য ভালো কিছু করার “প্রায় অসম্ভব” কাজটা শুরু করার জন্য মাশরাফির চেয়ে যোগ্য মানুষ এদেশে নেই!
আমি নিশ্চিত মাশরাফি যদি “ধইঞ্চা” মার্কা নিয়ে ও নির্বাচন করে সে তো জিতবেই এমনকি তার বিপক্ষে অনেক হেভীওয়েট প্রার্থীর – জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার চান্স আছে।
ক্রিকেট দুনিয়ার ২২ গজে এই মাশরাফি ই আমাদের চেহারা বদলে দিয়েছে, কে জানে দেশটার রাজনীতির চেহারাও হয়তো বদলে যাবে তার ছোঁয়ায়!!