করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য। সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে রপ্তানি খাত। প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টসের ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। এতে তারল্য সংকটে পড়ে শিল্পকারখানা। আগামী দিনে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সুদমুক্ত কিংবা নামমাত্র সুদে শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে কাজে লাগিয়ে ১ শতাংশ ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী উত্পাদন খাতকে আগামী এক বছরের জন্য ঋণের সুদ মওকুফ করা, সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) স্কিমের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে যাতে তারল্য সংকট দেখা না দেয়, সে জন্য আগামী এক বছরের জন্য নগদ জমার হারে (সিআরআর) ন্যূনতম মাত্রা শিথিল করা, অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘স্বল্প সুদের এমএসএমই অর্থায়ন সুবিধা’ তৈরি করা, বাণিজ্যিক ভাড়ার ওপর, বিদ্যুত্ বিলসহ সব ধরনের পরিষেবা ও লাইসেন্স নবায়নের ওপর আগামী এক বছর পর্যন্ত ভ্যাট প্রত্যাহার করার দাবিও জানিয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য আমদানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহূত সরঞ্জাম এবং রপ্তানিমুখী উত্পাদনশীল শিল্পের ওপর থেকে আগামী এক বছরের জন্য অগ্রিম কর (এটি) এবং ভ্যাট মওকুফ করা এবং ব্যক্তিশ্রেণির ও কোম্পানির করের হারে ছাড় প্রদানের বিষয়টি ভাবতে পারে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাবের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
চার দাবি বিটিএমএর :এদিকে গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি আদেশ কমায় উদ্বিগ্ন এর কাঁচামাল সরবরাহকারী টেক্সটাইল মিল মালিকেরাও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) চার দফা দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে। গত ২২ মার্চ সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে এ খাতের শিল্পের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে ছয় মাসের সমপরিমাণ একটি তহবিল গঠন করে তা থেকে মিলগুলোকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া এবং তা পরবর্তী ৩৬ মাসে পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এছাড়া টার্ম লোনের সুদ ছয় মাসের জন্য মওকুফ করা এবং ঋণ পরিশোধ ছয় মাস স্থগিত করা, আগামী ছয় মাসের জন্য সব ধরনের পরিষেবার বিল স্থগিত রাখা এবং নগদ সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।