বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও মানুষ ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হচ্ছে। ফলে খাদ্যসামগ্রীর বাইরে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের বিক্রি বাড়ছে। এর ফলে ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে সরবরাহ চেইন। অন্যদিকে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ফ্যাশনেবল পণ্যের বাইরে প্রয়োজনীয় কিংবা অপেক্ষাকৃত কম দামের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। এই শ্রেণির পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে সুবিধা নিচ্ছে বাংলাদেশ।
গত জুন থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক চেহারায় আসার মধ্যেই চলতি মাসে সুখবর মিলেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র হিসাব অনুযায়ী, আগস্টের প্রথম ২৫ দিনে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৭০ কোটি ডলারেরও বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরবর্তী মাসের রপ্তানি আদেশের প্রবণতাও আশাব্যঞ্জক। নারায়নগঞ্জে অবস্থিত ফতুল্লা গার্মেন্টসের মালিক ফজলে শামীম এহসান বলেন, ভালো ক্রয়াদেশ থাকায় তার কারখানার পূর্ণ সক্ষমতা এখন ব্যবহার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাড়তি কিছু রপ্তানি আদেশ থাকায় অন্য কারখানায় সাব কন্ট্রাক্টেও কাজ করাতে হচ্ছে। তিনি জানান, তার কারখানায় এখন দক্ষ শ্রমিকের অভাব। তার মতো অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষই শ্রমিক খুঁজছে।
অবশ্য সব উত্পাদকের অবস্থা ফতুল্লা গার্মেন্টসের মতো নয়। বেশকিছু কারখানা এখনো পর্যাপ্ত রপ্তানি আদেশের অভাবে পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। দেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভিয়েলাটেক্সের চেয়ারম্যান ডেভিড হাসনাত বলেন, তাদের রপ্তানি আদেশ ৭০ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। মুনাফা না হোক খরচ উঠাতে হলে অন্তত সক্ষমতার ৭০ শতাংশ ব্যবহার হতে হবে।
আরো কয়েকজন কারখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের রপ্তানি আদেশ বেড়েছে। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতা ব্যবহার হওয়ার মতো কাজ আসছে না। অবশ্য সার্বিকভাবে এই প্রবণতাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন তারা।
অবশ্য রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, অর্ডার বাড়লেও কম দর দিতে চান ক্রেতারা। অন্যদিকে স্থানীয় রপ্তানিকারকরা কাজ নেওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করায় দর কমে যাচ্ছে।
বিমানে পণ্য যাওয়ার হারও বেড়েছে। আগে তিন থেকে চার মাস লিড টাইম (ক্রয়াদেশ পাওয়া থেকে পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) পাওয়া গেলেও এখন এক থেকে দেড় মাসের সময় পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্ডার ধরতে হলে রপ্তানিকারককে কাঁচামাল এবং এক্সেসরিজের কিছু ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগের মতো অর্ডার পাওয়ার পর কাঁচামাল কিংবা এক্সেসরিজ ক্রয় বা আমদানি করার সময় থাকবে না। এছাড়া এখন বিমানে স্যাম্পল আসা যাওয়া বেড়ে গেছে। কিন্তু বিমানবন্দরে এসব পণ্য ছাড়ে শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতায় অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রপ্তানিকারকদের।
রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ফ্যাশনেবল পণ্যের চাইতে অপেক্ষাকৃত কম দামের পোশাকের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। দেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের কর্ণধার কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়ালমার্টসহ সাধারন ও প্রয়োজনীয় পোশাক (বেসিক আইটেম) বিক্রি করা ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি ইদানীং বেড়েছে। এর অর্থ হলো মানুষ এখন কম মূল্যের পোশাকের দিকে যাচ্ছে। এ জাতীয় পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। ফলে করোনাকালে এই সুবিধা নিতে পারবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ থেকে অন্যতম বড় আমদানিকারক ব্রিটিশ ব্র্যান্ড মার্কস এন্ড স্পেন্সার। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অফিসের প্রধান স্বপ্না ভৌমিক বলেন, করোনার পরে তাদের ব্যবসাও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে টি শার্ট, বাচ্চাদের জামা, আন্ডার গার্মেন্ট, জার্সিসহ অপেক্ষাকৃত প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালামও জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী সাধারন মানের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনা ভালো।
এদিকে রপ্তানিতে গতি ফিরলেও কাজের অভাবে পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়া ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কথাও শোনা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত বন্ধ ও লে-অফ (সাময়িক বন্ধ) হয়েছে ১ হাজার ৯১৫টি কারখানা। এ পর্যন্ত ৮৭টি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে সাড়ে ২৬ হাজার। এছাড়া সব মিলিয়ে এ খাতে প্রায় সোয়া তিন লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে।