সরকার এবার ব্যাকটু ব্যাক এলসি সুবিধা দিয়ে নাসা গ্রুপকেও অর্থায়নের মধ্য দিয়ে তাদের ব্যবসা চালু রাখতে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী এই গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন ও কারখানা চালু রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঋণের খেলাপি থাকলেও, বিশেষ নীতিমালা অনুসারে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার সুযোগ সহ অন্যান্য নীতি সহায়তা দিয়ে কারখানা চালু রাখা এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে সহায়তা প্রদান করা হবে। এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা দ্রুত কার্যকর করার চেষ্টা করছে।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক নাসা গ্রুপের ঋণদাতা ব্যাংকদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার মাধ্যমে এই গ্রুপের আয় থেকে পাওনাদার ব্যাংকগুলো কোনো কিস্তি নিতে পারবে না। সেই অর্থ শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচে ব্যবহৃত হবে। এরপর যদি কোনো অবশিষ্ট অর্থ থাকে, তবে তা ঋণ পরিশোধে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে ব্যাংকগুলোর জন্য নীতিগত সমর্থন চাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর ফলে নাসা গ্রুপের ঋণপ্রদানকারী ব্যাংকেরা দ্রুত তাদের ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। অত্র সময়ের মধ্যে, নাসা গ্রুপের শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো ২০২৩ সালে ৪,৫৮০ কোটি টাকা ও ২০২৪ সালে ৩,২০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।
নাসা গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান খন্দকার মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেন, “বৈঠকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা আশা করি, শ্রমিক- কর্মচারী, রপ্তানি ও কারখানা টিকিয়ে রাখার জন্য সকল পক্ষ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে আসবে।” তিনি যোগ করেন, “জুন পর্যন্ত সকল বেতন পরিশোধ হয়েছে। ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি না থাকায় আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে। তবে if সরকার ও ব্যাংকগুলো পাশে থাকলে অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।”
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “নাসা গ্রুপের কারখানা চালু রাখতে আমরা নীতিগত সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দীর্ঘ সময় তারা চলতে পারলেও এখন আর নিঃশেষে, এতে ২৫-২৭ হাজার শ্রমিক কাজ করেছে। কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিক বেকার হয়ে যায় ও শ্রম অসন্তোষ বাড়বে, যা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানান, রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার জন্য এলসি সুবিধা দেওয়ার জন্য নাসা গ্রুপ ঋণদাতা ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে পারবে। এর আগে, সরকার ব্যস্তভাবে বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে ৫২৫.৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, যা ১৪টি শিল্প ইউনিটের ২৭ হাজারের বেশি শ্রমিকের সুবিধার্থে কার্যকর হয়।
নাসা গ্রুপের কার্যক্রম সংকটের কারণ হিসেবে সেটি নিশ্চিতভাবে চ্যালেঞ্জে পড়েছে, মূলত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং ও অর্থ পাচারের মামলা ও গ্রেপ্তারির কারণে। সিআইডি অভিযোগ করেন, তিনি অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এর ফলে, ২০২০-২০২৪ সালে, তার সংগত সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফিরোজা গার্মেন্টসের মাধ্যমে কোটি টাকা পাচার হয়।
নাসা গ্রুপের অস্থিতিতে ব্যাংক ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোও এই বিষয়ে অর্থের সুরক্ষা ও পুনর্বিন্যাসের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে, ইসলামি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংকসহ বেশকিছু ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে।
নজরুল ইসলাম মজুমদার এখন জেল হাজত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মামলার শুনানি চলছে। তিনি জামিনের জন্য আবেদন করেছেন ও সব অর্থ ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তবে তাঁর ব্যবসায়িক পরিবেশ ও শ্রমিকের জীবনঅস্তিত্ব পরিস্থিতি স্পষ্টতই সংকটময়। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ ও সকল পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন।