রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধানের জন্য একটি বাস্তব ও কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ও সদয় অবদান জরুরি। এই লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক অংশীজন সংলাপ’-এর দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য দ্রুত মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নিতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে এই দিনে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে এবং প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু এই ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক চাপ তৈরি করছে, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিক থেকে।ড. ইউনূস বলেন, মানবতার দৃষ্টিকোণে আমাদের দায়িত্ব হলো রোহিঙ্গাদের জান-প্রাণের ঝুঁকি কমাতে ও তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদার করা। তাঁর ভাষায়, আমরা এখনও তাদের চোখে ভীতি দেখতে পাই, কারণ তারা তাদের অসহায় পরিস্থিতি আমাদের কাছে ব্যক্ত করে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করেছে, কিন্তু এখন দ্রুত, টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। তিনি সাত দফা কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে—১. রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা, ২. জীবন রক্ষাকারী সাহায্য অব্যাহত রাখা এবং দাতাদের প্রতিশ্রুতি পালনে অবদান রাখা, ৩. নিপীড়ন ও হিংসা বন্ধে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ, ৪. মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি, ৫. আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ, ৬. নিপীড়ন বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ এবং ৭. মানবাধিকার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই সংলাপ ও কর্মপরিকল্পনা জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ precursor হিসেবে কাজ করবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই সম্মেলনে বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টা ভ্রমণের আগেও কক্সবাজারে অবতরণ করেন এবং সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন। আগামী ২৬ আগস্ট ক্যাম্প পরিদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই সমস্ত উদ্যোগ ও সমর্থন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধান সম্ভব হবে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব সমাজেরও জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার।