ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার একদিনে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ত্রাণের খোঁজে গাজায় যাওয়ার পথে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন। এর পাশাপাশি, অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছেন আরো চারজন, এর মধ্যে দুজনই শিশু। এই তথ্য জানিয়েছে সংযুক্ত সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বৃহস্পতিবার রাতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হটকারি হামলা অব্যাহত রয়েছে, যেখানে রাজধানী শহরটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র বোমাবর্ষণ চালানো হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভোর থেকে শুরু হওয়া এই আক্রমণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে কয়েকজন সাধারণ মানুষ, যারা ত্রাণ পাওয়ার জন্য গাজায় গিয়েছিলেন। গাজাস্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছিলো ব্যাপক ধ্বংসস্তূপ ও বাড়ি হারানোর ঘটনা।
ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীর দখল নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগর কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক মহল এই হামলার ওপর উদ্বিগ্ন, কারণ এভাবে প্রাণহানি ও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ অবস্থা নিয়ে বলেন, এই অভিযান যুদ্ধের “একটি নতুন ও ভয়াবহ অধ্যায়ের সূচনা”। তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজা শহরে সেনা অভিযান অসহনীয় পরিণতি ডেকে আনবে, যেখানে বহু বেসামরিক জীবন ঝুঁকিতে থাকবে ও পরিবারগুলো বিপদে পড়বে।
অবস্থার হতাশাজনক ছবির মাঝে, গাজা শহরের বহু পরিবার তাদের ঘর ছেড়ে উপকূলের দিকে রওনা দিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী শুজাইয়া, জায়তুন ও সাবরা এলাকায় তীব্র বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার सিভিল ডিফেন্সের তথ্য বলছে, জায়তুনের দক্ষিণাংশে প্রায় ১৫০০টির বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, যেখানে এখন আর কোনো স্থৈর্য্যশীল ভবন নেই।
উল্লেখযোগ্য যে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গাজা শহরকে হামাসের প্রধান অস্ত্রাগার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁরা দাবি করেন, পুরো শহরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অনেক হামাসের জংডা ও অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু হিসেবে রয়েছে।১৭ই আগস্ট থেকে বুধবার পর্যন্ত, তিনজন যোদ্ধা নিহতের খবর পাওয়া গেছে, যদিও তাদের আইডি বা পরিচয় প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়নি।
ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থাগুলোর তথ্যানুসারে, বৃহস্পতিবার নিহতদের মধ্যে খানের ইউনিসে একটি তাঁবু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এক নারী ও তার শিশু রয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা “গুম হয়ে যাওয়া” ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ত্রাণ কেন্দ্রের খাবার খোঁজতে গিয়ে কিছু শিশুসহ কয়েকজন অসংখ্য মানুষ জোরপূর্বক নিখোঁজ হয়েছেন। তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ক্ষুধার্ত মানুষকে গুম করা কি ঘটনাই বা হতো, এটাই এখন মানবতা ও আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন।”
অন্যদিকে, গাজায় চলমান তীব্র মানবিক সংকটের মধ্যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে বৃহস্পতিবার আরও চারজন অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে দুই শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধার কারণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৭ জনে, যাদের মধ্যে ১২১ জন শিশু।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতির চিত্র অনেক করুণ। পরিবারের সদস্যরা গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্যুপ বানানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেকের হাতে কিছুই আসে না। অনেকে জীবন ঝুঁকি নিয়ে খাবারের জন্য বিতরণ কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি ফুটে উঠে, যেখানে ক্ষুধা ও অর্ধাহার আগের চেয়ে বেশি প্রকট।