প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ দিনটি থেকে শুরু হওয়া এই দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রা।
জোড়ালো ইতিহাসের অংশ হিসেবে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সময় জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এর মোড়ে, ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
বিগত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর তিনি দু’বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন, তবে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান। ২০২২ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির অনুশীলনে তার মুক্তি হয়। ৭৯ বছর বয়সী এই নেত্রী বর্তমানে নানা শারীরিক সমস্যার কারণে সক্রিয় রাজনীতির সাথে সংস্রব কমিয়ে দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তারেক রহমান, যিনি ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই দলের পরিচালনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করে, যা মাত্র ৪৫ দিন টিকে ছিল। এরপর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে নিশ্চয়তা দিয়ে আবার সরকার পরিচালনা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। এটি ছিল বিএনপির শেষ সরকার, এর পর থেকে তারা ক্ষমতার বাইরে।
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি তার বাণীতে উল্লেখ করেছেন, দেশের স্বাধীকার, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তাদের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, “জনগণের অধিকারের জন্য সচেতন হওয়া, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, মুক্ত মতপ্রকাশ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।”
তারেক রহমান আরও বলেছিলেন, “বিএনপি প্রতিষ্ঠার মূল নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ যে, বাংলাদেশি ভূমির অপূরণীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্থায়ী ভিত্তি গড়ে তোলা হবে। ১৯৭৮ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশপ্রেমের ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বাংলাদেশের জন্য এক শুভ শক্তির সূচনা।”
একই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের বাণীতে বলেন, “সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের স্বাধীনতা ও অধিকার সুদৃঢ় করা সম্ভব। দুনীতির বিচারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য।”
বিএনপির এই বিশেষ দিন উপলক্ষে ১৬ সদস্যের ‘জাতীয় উদযাপন’ কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক নিযুক্ত হন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের অন্যান্য কার্যালয়গুলো সঙ্গত পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় সমাধি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করা হবে।
এছাড়াও ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে র্যালি বের হবে। এই দিনটিতেও নানা কর্মসূচি পালন করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা ও র্যালি। এই সব উদ্যোগের মাধ্যমে বিএনপি আজকের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টা করছে।