সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে দেশে, যা সমাজে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক এবং ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়ে চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছেন নির্বিঘ্নে, যার সংখ্যা এখন পর্যন্ত সাত মাসে ৩৬৮ বার পৌঁছেছে।
সরকারের আপডেটের তথ্যানুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে সারাদেশে মোট ১ লাখ ৬ হাজার ৭৮৩টি মামলা দায়ের হয়েছে বিভিন্ন অপরাধের জন্য। এর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যের উপর হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য এবং উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগস্ট মাসে অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জুলাই মাসে এই ঘটনাগুলির সংখ্যা ছিল ৫১, যেখানে ১৬ জন নিহত হন। গণপিটুনির শিকার প্রায়ই শিরোনামে আসে মূলত চুরিচারির অভিযোগে ও সন্দেহজনক অপরাধে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অপরাধের মোকাবেলায় সরকারের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর ও সক্রিয় হওয়া জরুরি। একদিকে অপরাধীর শান্তিপূর্ণ সমাধান ও অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে; অন্যদিকে উদ্ধার না হওয়া আধিপত্যশালী অস্ত্রগুলো বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।
পুলিশের আধिकारिक তথ্যে জানা গেছে, এই সাত মাসে দেশে খুনের মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,২৯৩টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৩ হাজার ১৩০টি, অপহরণ হয়েছে ৬২৫টি, এবং ছিনতাই-চুরির ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৮৭ বার। সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এসব ঘটনা উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালে মোট মামলা ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৫টি, যার মধ্যে খুনের মামলা ৩ হাজার ৪৩২টি, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৭ হাজার ৫৭১টি।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রদান করা তথ্য অনুযায়ী, গণপিটুনিতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। আগস্ট মাসে অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ২৩ জন নিহত ও ৪৩ জন গুরুতর আহত। জুলাইয়েও এই সংখ্যা ছিল বেশি, মোট ৫১টি ঘটনা। এসব গণপিটুনির শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেরই অভিযোগ ছিল চুরির বা সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের।
এছাড়া আগস্ট মাসে ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, এর মধ্যে ৪৭টি ধর্ষণ, ১৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং ৪টি ধর্ষণে হত্যা। ধর্ষণের শিকার বেশিরভাগই শিশু ও প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী ও কিশোরীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও উচ্চমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজনৈতিক দিক থেকেও দেশে সহিংসতা বৃদ্ধির চিত্র দেখা যাচ্ছে। আগস্ট মাসে ৪৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যেখানে ৫৪৯ জন শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত। এসব সহিংসতার মূল কারণ হলো রাজনৈতিক বিরোধ ও দাঙ্গা, যেখানে পার্টির অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোরতা ও কার্যকর প্রচেষ্টা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, দেশে অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। কিছু চক্র যেন এই অপরাধকে তাদের আয়-উপার্জনের মূল উৎস হিসেবে দেখে। তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও আরও কঠোরতা ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন।