১১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দেশের সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আলোচনায় কোনো সমঝোতা গড়ে উঠেনি। এই দিনব্যাপী বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়, যার মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকতে দেখা গেছে।
বৈঠকের শুরুতে আলোচনা ছিল সংবিধান সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের বাস্তবায়নের পথ নিয়ে। বিএনপি মনে করে, এই সংস্কার কার্যকর করার জন্য এটাই একমাত্র পথ, যা শুধুমাত্র আগামী জাতীয় সংসদে আলোচনা ও অনুমোদন পেলে হবে। অন্যদিকে জামায়াত বলেছে যে, রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে এই সংস্কার আগেভাগেই কার্যকর হওয়া উচিত। এনসিপি বলছে, টেকসই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন আধুনিক সংবিধানে ফেরার চিন্তা, অর্থাৎ গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন অপরিহার্য।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোট ছাড়া এ সংস্কারের আইনি ভিত্তি তৈরি হবে না, এতে বিপ্লব ব্যর্থ হবে।’ এর প্রতিউত্তরে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘পুরোনো সংবিধানের খাঁজে কাজ চলবে না, নতুন সংবিধানই একমাত্র সমাধান।’
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ যুক্তি দেন, দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে, তাই বিশেষ আদেশ বা গণভোট সাংবিধানিকভাবে অসাংবিধানিক। তিনি আরও বলেন, ‘উপযুক্ত সময়ে সিদ্ধান্ত না নিলে দুটি সংবিধান চলবে, যা আদালতের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।’ তিনি প্রস্তাব করেন, সব দল এখন সনদে স্বাক্ষর করুন এবং পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে এর বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করুন।
আলোচনায় ঐকমত্যের বাইরে থাকলেও, কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠকের শেষে জানিয়েছেন, আলোচনা এখনও চলমান এবং আগামী রোববার আবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, দুটি বিষয়ে ইতিমধ্যেই ঐক্যমত হয়েছে—সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয় এমন প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারী অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করা যাবে, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ ও বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে আরও বেশি জটিল বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব।
তিনি আরও জানিয়েছেন, সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে, এবং তাদের দুজন করে স্বাক্ষরকারী নির্বাচনের জন্য ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে, এখনো সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয় যে, সব দল এ সনদে সই করবে কি না—কারণ বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনো চূড়ান্ত নয়।
শীর্ষক খবর, আজকের খবর