ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মোবারকজন সড়ক ও রেলপথে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছেন এলাকাবাসীরা। শনিবার সকাল থেকে উপজেলার মুনসুরাবাদ এলাকার কিছু অংশ কাফনের কাপড় পরে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ও রেলপথে যানবাহন বন্ধ রয়েছে, যার কারণে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, ভাঙ্গার কমপক্ষে সাতটি স্থানে মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে স্থানীয় গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও সেনাবাহিনী মাঠে গেছে। ব্যাপক আগুন, গাছের গুঁড়ি ও বেরিকেট দিয়ে করেছে প্রতিবাদকারীরা। তারা বলে, এই অবরোধের উদ্দেশ্য হলো দুটি ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এবং তাদের দাবী পূরণ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
অবরোধের কারণে যানবাহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রশাসন পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাব নিয়োজিত রয়েছেন।
পূর্বে এক রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, যদি ফরিদপুর-২ আসন থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন করে রাখতে না হয়, তাহলে তারা আঞ্চলিক নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ ব্যাপারে আলগী ইউপি চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিকসহ নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত বর্বরোচিত, এবং তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে তারা রক্ত দিয়ে হলেও নিজের প্রাপ্য অবস্থানে ফেরত যাবে। তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ চালানো হবে। এর মধ্যে ভাঙ্গা পৌর শহর থেকে বিভিন্ন রাস্তায় ও মোড়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। তারা জানান, যদি এই বিভক্তির সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয় এবং হয়রানির আশংকা তৈরি হয়, তাহলে ভাঙ্গার ১২টি ইউনিয়নের মানুষ অবরোধ চালিয়ে যাবেন।
চলতি প্রতিবাদে অংশ নেওয়া নেতারা যুক্তি দেন, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা আছে তা তদন্ত করে বের করতে হবে। সেই সঙ্গে তারা ভবিষ্যতেও এই অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
অবরোধের সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রোকিবুজ্জামান জানান, সকাল থেকে অবরোধ চলছে। তবে আগেই ঘোষণা থাকায় যানবাহনের চাপ ছিল কম। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী অবস্থান করছি।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে, তার জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ভোর থেকে মহাসড়কে চারজন ম্যাজিস্ট্রেট ও নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের আধা-হাজারের বেশি সদস্য টহল দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত বলা হয়, ২০১৩ সালের আগে ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা ছিল ফরিদপুর-৪ আসনে এবং ভাঙ্গা ছিল ফরিদপুর-৫ আসনে। পরে পুনর্বিন্যাসের সময় ফরিদপুরের পাঁচটি আসনকে কমিয়ে চারটি করা হয়। সম্প্রতি ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, নির্বাচন কমিশন আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করতে গেজেট প্রকাশ করে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে ভাঙ্গায় আন্দোলন, মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, এমনকি হাইকোর্টেও রিট দায়ের করা হয়েছে ও রেলপথে অবরোধ চালানো হয়েছে।