বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দফা গুরুত্বপূর্ণ দাবি ঘোষণা করেছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এসব দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা জনগণের প্রত্যাশা ও জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য এই কর্মসূচি নিয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ থেকে পালিয়ে যান। এর ফলে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে যায়, সরকারের অস্তিত্ব সংকট সৃষ্টি হয়, এবং সংবিধান অনেক বিধান কার্যকর থাকতে ব্যর্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের অভিপ্রায় ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, যা দেশের স্বার্থে বিভিন্ন প্রস্তাবের মাধ্যমে সংস্কার ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। ডা. তাহের বলেন, সংবিধানের ত্রুটির সুযোগে শাসন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায়, রাষ্ট্রের সব বিভাগে সংস্কার অপরিহার্য হয়ে ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন কমিশন গঠন করে জনগণের মতামত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, জামায়াতে ইসলামীতর পক্ষ থেকে জুলাই সনদের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় বরাবর। তারা বিশ্বাস করে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ document এর জন্য আইনগত ভিত্তি না থাকলে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই অভ্যুত্থান ও তার ফলাফল ব্যর্থতা মুখে পড়বে। এই কারণে তারা অব্যাহতভাবে জুলাই সনদকে আইনি মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করে আসছেন। পরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রস্তুত হয়েছে। জামায়াত অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে, যেমন কালো টাকার ব্যবহার রোধ, ভোট কেন্দ্রে আধিপত্য ও অপতৎপরতা বন্ধ, মানসম্পন্ন প্যার্লামেন্ট ও দক্ষ আইনপ্রণেতা নির্বাচনের দাবি। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও গবেষকরা এই পদ্ধতির সমর্থন দিচ্ছেন। ডা. তাহের নিশ্চিত করে বলেন, জনগণের নানা দাবি নিরাপদে কার্যকর করতে এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ৫ দফা গণদাবি ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো: ১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন করানো। ২. উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। ৩. অপ্রীতিকর ও অনিয়মমূলক কার্যক্রম বন্ধ করে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা। ৪. জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার সম্পন্ন করা। ৫. স্বৈরাচার মহলের দোসর রাজনৈতিক দলসমূহ নিষিদ্ধ করা। এসব দাবির বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে, যার মধ্যে রয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ ও ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা ও উপজেলাসমূহে বিক্ষোভ। তিনি বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায় নিশ্চিত করতে চায় সংগঠনটি। ডা. তাহের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে মূল বাধা হলো রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব। তিনি জানান, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে না আসায় কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। তবে, তিনি আশাবাদী, পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এবং দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দাবি বাস্তবায়নের জন্য আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করা হবে, এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে। তিনি বলেছেন, তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আব্দুর রব, মোবারক হোসেন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। আমরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের পথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।