প্রায় ৩৯ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন করে পণ্যবাহী জাহাজ, কনটেইনার ও অন্যান্য সেবার জন্য মাশুল বা চার্জ বৃদ্ধি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ থেকে এই নতুন হারে কার্যকর হবে। নতুন এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে এই নতুন চার্জের প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
গেজেট অনুযায়ী, প্রত্যেকবার বন্দরে প্রবেশের জন্য প্রতি গ্রজ টন অনুযায়ী ০.৩০৬ ডলার, পোর্ট এলাকার লাইটার ও ট্যাংকারের জন্য ওয়ার্কিং চার্জ হিসেবে ০.১৭ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ডেঞ্জারাজ গুডস বা বিপজ্জনক পণ্য, ডেড ভ্যাসেল, লাইটারেজসহ অন্যান্য সেবার জন্য অতিরিক্ত চার্জ ধার্য করা হয়েছে। এই নতুন হার অনুযায়ী, ডেঞ্জারাজ গুডসের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের জন্য ৫০ শতাংশ, লাইটারেজে ৫০ শতাংশ, ডিলে বা অতিরিক্ত সময়ে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ আরোপিত হবে।
জাহাজের প্রবেশ ও প্রস্থানেও নতুন নির্ধারিত হার রয়েছে। মুভমেন্টের জন্য সর্বনিম্ন পাইলটিং চার্জ ধরা হয়েছে ৮০০ ডলার হলো, এবং ১০ হাজার গ্রজ টনের ওপরে প্রতি গ্রজটনে অতিরিক্ত ০.৮ ডলার চার্জ ধার্য করা হয়েছে। ব্রেকিং জার্নি বা যাত্রা বিরতিতে এই চার্জে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত, আবার প্রবেশ বাতিল করলে প্রতিবার ২০০ ডলার, নাইট নেভিগেশনের জন্য ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত, বার্থ শিফটিংয়ের জন্য প্রতি মুভমেন্টে ৮০ ডলার।
কর্পোরেট নৌযানগুলোর জন্য টাগ ব্যবহারের চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০০ থেকে ১০ হাজার গ্রজটনের জন্য ভেতরে ৬১৫ ডলার, বাইরে ১২৩০ ডলার। ৫০০০ থেকে ১০ হাজার গ্রজটনের জন্য ভেতরে ১২৩০ ডলার ও বাইরে ২৪৬০ ডলার, ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার গ্রজটনের জন্য ভেতরে ২০৫০ ডলার ও বাইরে ৪১০০ ডলার। আর ২০ হাজারের বেশি গ্রজটনের জন্য ভেতরে ৩৪১৫ ডলার ও বাইরের জন্য ৬৮৩০ ডলার নির্ধারিত হয়েছে।
ডিজেবল বা ডেবিটাল ভ্যাসেল বা অনুরূপ জাহাজের ক্ষেত্রে মূল চার্জের উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ, বাতিলের জন্য ৫০ শতাংশ, শিফটিং বা স্থানান্তরের জন্য ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ আরোপিত হবে। এছাড়াও, কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৪ ঘণ্টার বেশি সার্ভিসের জন্য ২৫ শতাংশ, নদীর বাইরে ৬ ঘণ্টার বেশি জন্যও নির্ধারিত হয়েছে।
বন্দর জিতে বার্থিং বা দখলে নেওয়ার জন্য প্রতি গ্রজটনে ঘণ্টা অনুযায়ী ০.০০৪ ডলার, বার্থিং শেষের আনবার্থিং এর জন্য ৯৪.৩২ ডলার। সমুদ্রগামী জাহাজের জন্য দিনে ২২৪.৮৫ ডলার, এবং সমুদ্রগামী নয় এমন জাহাজের জন্য দিনে ২২.৪৯ ডলার চার্জ ধার্য হয়েছে। নোটিশ না দিয়ে বার্থ ত্যাগ করলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টা ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ৪০০ শতাংশ ও ৩৬ ঘণ্টার বেশি দেরিতে ৯০০ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ যোগ হবে।
জাহাজে পানির সরবরাহের জন্য মূল সাপ্লাই লাইন থেকে প্রতি ১০০০ লিটার জন্য ২.৯২ ডলার, বন্দরের ট্রাক (৫ কিলোমিটারের নিচে) থেকে একই পরিমাণে ৬.২৩ ডলার, ৫ কিলোমিটারের বেশি হলে ৮.২৩ ডলার, কর্ণফুলী নদীর মধ্যে পানি দেওয়ার জন্য ১২.৪৬ ডলার, পতেঙ্গা লাইট হাউজ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ১৮.৬৯ ডলার এবং এর বাইরে ২৪.৯৬ ডলার। পানির অতিরিক্ত ওভারহেড চার্জ প্রতিমাত্রা ২০ শতাংশ।
ওয়েস্ট হ্যান্ডলিং বা হ্যান্ডলিং চার্জের ক্ষেত্রে, কর্ণফুলী নদীর মধ্যে প্রতি সেবা ২৪৫৬.৯৯ ডলার, নদীর বাইরে প্রতি ট্রিপে ৪০৬৩.১৫ ডলার নির্ধারিত হয়েছে।
বন্দরে ক্রেনে পণ্যবোঝাই ও আনবোঝাই জন্য ব্যবহৃত ভিন্ন ভিন্ন চার্জ রয়েছে। ২১ ফুটের নিচে প্রতি কনটেইনার ২০.৮০ ডলার, ২১ থেকে ৪০ ফুটের জন্য ৩১.২০ ডলার, ৪০ ফুটের ওপরের জন্য ৩৫.১০ ডলার। খালি কনটেইনারের জন্য এই হারগুলো অন্য রকম। জেটি ক্রেনের জন্য প্রতি ৮ ঘণ্টায় ১০ টনের নিচে ৫৮.২৪ ডলার, ১০ থেকে ৪০ টনের জন্য ১৭৪.৭২ ডলার, ৪০ টনের ওপরের জন্য ২৯১.২০ ডলার এবং হ্যাজ ক্যাভার এর জন্য ৩৫.১০ ডলার খরচ ধরা হয়েছে।