ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় বাজেটের অপ্রকাশ্য কাটছাঁটের কারণে দেশটি উত্তাল হয়ে উঠেছে। ট্রেড ইউনিয়ন ও বামপন্থি দলগুলোর আহ্বানে বৃহস্পতিবার রাজধানী প্যারিসসহ দেশের বিভিন্ন শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছে, যা দেশজুড়ে তীব্রতর হচ্ছে।
প্রতিরোধকারীদের দাবি, এদিন কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে, ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের বিভিন্ন শহরে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিক্ষোভের কারণে প্যারিস, লিওন ও নানতেসসহ বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যেখানে টিয়ারগ্যাস, লাঠি ও শিল্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা চালানো হয়েছে।
এছাড়া, আন্দোলনের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানীর বেশির ভাগ মেট্রো এবং অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন সড়কেও অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছে, যেখানে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ভবনের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এমনকি, দেশের বেশির ভাগ ওষুধের দোকানও বন্ধ রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের দোকানই এখন বন্ধ।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধস্তাধস্তির ফলে পুলিশি অভিযানের সময় প্যারিসসহ বিভিন্ন শহর থেকে প্রায় ৩ শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এই ব্যাপক আন্দোলনের মূল কারণ হলো সরকারের বাজেটের ধারাবাহিক কাটছাঁট, বিশেষ করে চলতি সেপ্টেম্বরে সদ্য বিদায় নেওয়া প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্কোইস বায়রো বিভিন্ন সেক্টর থেকে একযোগে ৪৪০০ কোটি ডলার অর্থ কাটা।
বিরোধী দলের সদস্যরা এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও দুর্বল হবে। ৯ সেপ্টেম্বর আস্থা ভোটে হেরে বায়রো সরকার পতনের মুখে পড়ে। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন সেবাস্টিয়ান লেকোর্নু, তবে এখনো তার মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু হয়নি।
অবশ্য, বাজেট কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত বদলায়নি লেকোর্নু সরকার। এর ফলে, নতুন প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহ পরও অর্থনীতিতে এই পরিবর্তন না আসা মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এতে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর হচ্ছে।
ইতিমধ্যে, একজন ৩৬ বছর বয়সী আইটি কর্মী, প্যারিসের বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমি বিক্ষোভে গিয়েছি কারণ আমি ম্যাক্রোঁর নীতি পছন্দ করি না, পাশাপাশি বায়রোর বাজেটও সমর্থন করি না। আমি চাই সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ কমানো না করে বরং বাড়িয়ে দিক। ধনীদের উপর আরও বেশি কর আরোপ করতে হবে।”
ফ্রান্সের ট্রেড ইউনিয়নগুলোও এই প্রতিরোধে দৃঢ়সংকল্প। জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবার-এর নেত্রী সোফি বিনেট বলেন, “আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব এবং এর তেজ আরও বাড়বে। সরকারের ধনী-প্রতিপত্তির উপর ট্যাক্স বাড়ানোর নীতি পরিবর্তন করতে হবে।”
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ব্রুনো রেশিলিও জানান, সরকারের বাজেট কেটে নেওয়ার নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। তিনি বলেন, “বাজেটে কোনো পরিবর্তন হবে না। বিক্ষোভকারীরা যদি তাদের কর্মসূচি বন্ধ না করে, তবে গ্রেপ্তার বাড়বে।”
এنانও, কট্টর বামপন্থি দল ফ্রান্স আনবৌউড (এলএফআই) রেশিলিয়োকে সতর্ক করে দিয়েছে, “সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কোনও ফল ভয়াবহ হবে।” এই পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে, দেশজোড়া বিভাজন আরো বাড়ছে।