শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে প্রথমবারের মতো ৩৭ দশমিক ৪৬ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আটটি ট্রাকের মাধ্যমে এসব ইলিশ পাঠানো হয়। বেনাপোল বন্দর মৎস্য কোয়ারেন্টিন কর্মকর্তা সজীব সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই ইলিশগুলো রপ্তানি করেছে দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে সততা ফিশ, স্বর্ণালি এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ ও লাকী ট্রেডিং। অন্যদিকে, ভারতের ন্যাশনাল ট্রেডিং, এফএনএস ফিশ, জয় শান্তসী, মা ইন্টারন্যাশনাল এবং আরজে ইন্টারন্যাশনাল কিনে নিয়েছে।প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজা উপলক্ষে শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে দুই দেশের স্বার্থে এক হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর জন্য ন্যূনতম দর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি সাড়ে ১২ ডলার, তবে সর্বোচ্চ মূল্য এখনও ঠিক হয়নি। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়া মোট ৩৭ প্রতিষ্ঠান এই ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ টন করে, ৯টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০ টন করে এবং দু’টি প্রতিষ্ঠান ২০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এ সময়ের বেশি রপ্তানি বা অনুমোদিত পরিমাণের বাইরে যাওয়া বা অনুমতিকে অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। অনুমোদনের চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি সরকার মৎস্য আহরণ ও পরিবহনে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে, তবে তা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রপ্তানির অনুমতি বাতিল হবে। পাশাপাশি, প্রয়োজন মনে করলে সরকার যেকোনো সময় রপ্তানি বন্ধের অধিকার রাখে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। বেনাপোল বন্দরে জানা যায়, দেশের নানা প্রান্ত থেকে ইলিশের চাহিদার কারণে ২০১২ সালের পর সরকার রপ্তানি বন্ধ করেছিল। তবে দুর্গাপূজার সময়ে ভারতের বাঙালিদের জন্য এই মাছের স্বাদ পুনরায় দিতে বিশেষভাবে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত বছর ভারতীয় বাজারে ইলিশের রপ্তানি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন, কিন্তু বেনাপোলের মাধ্যমে মাত্র ৫৩২ মেট্রিক টন পাঠানো হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন মিললেও মাত্র ৬৩১ দশমিক ২৪ টন পাঠানো হয়। ২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৯০০ টন অনুমোদন থাকলেও রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৩০০ টন। এর আগে, ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ৪ হাজার ৬০০ টন ইলিশের অনুমোদন দেওয়া হলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১৯৯৬ টন। মহামারীর সময় ২০২০ সালে দুর্গাপূজার জন্য ১ হাজার ৪৫০ টন রপ্তানি অনুমোদন থাকলেও বেশির ভাগ পাঠানো সম্ভব হয়নি। ২০১৯ সালে ৫০০ টন ইলিশের অনুমোদন থাকলেও, রপ্তানি হয় ৪৭৬ টন।সাম্প্রতিক সময়ে ইলিশ রপ্তানিকারক ও স্বর্ণালি এন্টারপ্রাইজের সাইফুল ইসলাম বলেন, এবারের পাঠানো ইলিশের ওজন ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির মধ্যে, এবং ডিলও সরকারের নির্ধারিত দামে করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই রপ্তানি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।