গুয়াতেমালার ফুয়েগা আগ্নেয়গিরিতে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৯৯-তে দাঁড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৯৭ জন। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। আগ্নেয়গিরির লাভায় ভয়াবহ উত্তাপ এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ন্যাশনাল ডিজাস্টার এজেন্সি। লোকজনকেও উপদ্রুত এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
অস্থায়ী মর্গ এবং ছাইয়ে ঢাকা রাস্তার মধ্যে নিখোঁজদের মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। আগ্নেয়গিরির লাভায় শরীর পুড়ে যাওয়ায় নিহতদের শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মৃত ৯৯ জনের মধ্যে মাত্র ২৮ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
অস্কার শাভেজ নামের এক ব্যক্তি বাবাকে নিয়ে তার ভাই-ভাবী ও ভাতিজাকে খুঁজতে বেরিয়েছেন। রবিবার অগ্ন্যুৎপাত ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তাদের আর কোনও খোঁজ মেলেনি। অশ্রুসিক্ত অস্কার শাভেজ বলেন, হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব জায়গায় খোঁজা হয়েছে তাদের। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি।
মধ্য আমেরিকান দেশ গুয়াতেমালায় ৩৪টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এরমধ্যে ফুয়েগো একটি। স্প্যানিশ ভাষায় ‘ফুয়েগো’ শব্দের অর্থ ‘আগুন’। রবিবার (৩ জুন) থেকে গুয়াতেমালার ফুয়েগো আগ্নেয়গিরিটি থেকে এই বছরেই দ্বিতীয়বারের মতো অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। চার দশকের মধ্যে গুয়াতেমালায় এটি সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত। সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়,আগ্নেয়গিরি থেকে গল গল করে বেরিয়ে আসছে জ্বলন্ত লাভা স্রোত। বেরিয়ে আসছে ছাই। লাভার স্রোত গড়িয়ে গিয়েছে অন্তত ৮ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত। গুয়াতেমালার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (কনরেড) জানিয়েছে, উত্তপ্ত লাভার একটি স্রোত এল রোদেও গ্রামের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে ভিতরে থাকা লোকজনকে দগ্ধ করেছে। ছাইয়ের কারণে গুয়াতেমালা সিটির লা অরোরা বিমানবন্দর বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আগ্নেয়গিরিটি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে এসকিন্টলা শহরে একটি অস্থায়ী মর্গ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে নিখোঁজদের স্বজনদের ভিড়। প্রিয়জনকে মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা। মর্গে ছেলেকে খুঁজতে এসেছেন ৪৬ বছর বয়সী ফ্রান্সিসকো কিচে। ঝালাইয়ের কাজ করেন তিনি। সন্তানকে শনাক্ত করতে নিজের রক্তের নমুনা জমা দিয়েছেন ফ্রান্সিসকো। সন্তানের পরিণতি কী হয়েছে তা আগেই জানা হয়ে গেছে তার। এল রোদেও শহর ছাড়ার পর পুত্র আর পুত্রবধূকে খুঁজতে পরিবারসমেত এখানে এসেছেন তারা।
ফ্রান্সিসকো জানান, ঘটনার দিন ছেলের বাড়ির দেয়ালের ফুটো দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেছিলেন, তার মৃতদেহ পড়ে আছে। তার আশঙ্কা, পুত্রবধূও আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভায় ঝলসে গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে ফ্রান্সিসকো বলেন, ‘আমরা এলাকা ছেড়ে আসার সময় পেয়েছিলাম। ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা। কিন্তু ছেলে আর তার স্ত্রীকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছি আমি। আমার ছেলের বয়স মাত্র ২২ বছর। তার স্ত্রীও একই বয়সী। সে সন্তান-সম্ভবা ছিল।
ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত ও আবহাওয়াবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইনসিভুমেহ’র পরিচালক এডি স্যানশেজকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সন্ধ্যা থেকে অগ্ন্যুৎপাতের তীব্রতা কমতে শুরু করেছে। পরবর্তী কয়েকদিনে তা আরও কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।