বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিনিময়ে শুল্ক এবং অর্থপ্রদানের বিরোধের কারণে ভারতের গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ার আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যেতে চলেছে। রবিবার আদানি গ্রুপের এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে, যা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের অর্থপ্রদানসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে সংঘর্ষ এড়াতে দুটি পক্ষই আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূল বিষয়টি হলো, ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) আওতায় আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট খাতের ব্যয়ের হিসেব ও বিলিং পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ। এই বিরোধের জন্য উভয়পক্ষই দ্রুত সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে আলোচনায় বসেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে। যখন আলোচনা সমাপ্ত হবে, তখনই প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাব।
২০১৭ সালে গৌতম আদানির কোম্পানি গড্ডার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি ২৫ বছরের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই কেন্দ্র বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ প্রয়োজনের শতকরা প্রায় এক দশমাংশ পূরণ করে থাকে। তবে চলতি বছর ডিসেম্বরের একটি রিপোর্টে জানানো হয়, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য অভিযোগ ওঠে, কারণ তারা ভারতের কর-সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়নি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১৪.৮৭ টাকা পরিশোধ করেছে, যা অন্যান্য ভারতীয় কোম্পানির তুলনায় মোটামুটি বেশি। গত মে মাসে আদানি পাওয়ার দাবি করে, বাংলাদেশের পাওনা অর্থের পরিমাণi কমে এসেছে; মে মাসে এই পরিমাণ প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার ছিল, যা বছরের শুরুতে ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫ দিনের বিদ্যুৎ খরচের সমান।
আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বাংলাদেশের জন্য নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।
শুল্কের বিষয়ে বলা হয়, আদানি পাওয়ার গড্ডা প্ল্যান্টটি মূলত আমদানি করা কয়লার উপর চালিত, এবং এই কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সবই বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। এই চুক্তি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে বলে মনে করে কোম্পানিটি। ২০১৯ সালে নয়াদিল্লি এই প্ল্যান্টকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে, যা থেকে করছাড় ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায়।
তবে, গত বছর রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে কিছু চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের করহার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশকে দ্রুত জানাতে হবে। কিন্তু আদানি পাওয়ার তা করেনি। বিপিডিবির পক্ষ থেকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হলেও, তারা কোনো সাড়া পায়নি বলে জানা গেছে।
আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের করছাড় সুবিধার কারণে বিদ্যুতের দামে প্রায় শূন্য দশমিক ৩৫ সেন্ট সাশ্রয় হবে বলে ধারণা। গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ৮.১৬ বিলিয়ন ইউনিট, আর সেই সুবিধাগুলোর সমন্বয়ে প্রায় ২৮.৬ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সাশ্রয় হতো।
সবমিলিয়ে, এই বিরোধের সমাধান ও আলোচনা চলমান থাকলেও, শেষ পর্যন্ত ঘটনা কী মোড় নেবে তা এখনও অজানা। তবে স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও আদানি পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

