টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি জলাভূমি এবং সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, নৌচলাচল, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহার, জলজ বন ধ্বংস, অতিরিক্ত বালাইনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার এবং বর্জ্য নিঃসরণের কারণে এই এলাকাগুলোর পরিবেশে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পরিস্থিতির মোকাবেলায় সরকার ‘টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ’ জারি করেছে, যা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এই আদেশের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে উচ্চস্বরে গান-বাজনা বা পার্টি আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সোমবার (১০ নভেম্বর) পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
নতুন এই আদেশের মাধ্যমে নানা ধরণের পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতি এড়ানো লক্ষ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাখি ও পরিযায়ী পাখির শিকার, হাঁস পালনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম, গাছ কাটা ও জলজ বন ক্ষতিসাধনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, হাওর অঞ্চলের জলজ গাছের ডাল কেটে মাছের আশ্রয় বা ঘের নির্মাণ নিষিদ্ধ, এবং সংরক্ষিত এলাকা ও বিশেষ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
বৈধ অনুমতি ছাড়া জলাধার ও পরিবেশে পরিবর্তন আনা, পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত রুটের বাইরে চলাচল, প্রসবের জন্য অপ্রয়োজনীয় যান্ত্রিক ইঞ্জিন বা জেনারেটর ব্যবহারের উপরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধের তালিকায় রয়েছে উচ্চস্বরে গান-বাজনা, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহন, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরা, এবং বালু, পাথর বা মাটি উত্তোলন। শুষ্ক মৌসুমে সম্ভব হলে হাওরের জল সম্পূর্ণভাবে নিষ্প্রয়োজ করা যাবে না।
এছাড়া, হাওরে পাকা সড়ক নির্মাণে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে হবে এবং পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাবের মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে হবে। হাওর অঞ্চলে তরল ও কঠিন বর্জ্য, দূষণকারী কার্যকলাপ, ক্ষতিকর মাছ শিকার অভিযানসহ অন্যান্য অপ্রীতিকর কার্যকলাপ থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সবশেষে, এই সুরক্ষা আদেশ প্রতিপালন বাধ্যতামুলক এবং লঙ্ঘন হলে বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী কঠোর শাস্তি ও দণ্ডের ব্যবস্থা থাকছে। সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো, পরিবেশ রক্ষা ও জলজ বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

