যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও মৃতদেহ উদ্ধার করার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে চলেছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৯,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে, পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপনকারী আক্রমণ আরও তীব্র হয়ে উঠছে। এই তথ্যটি রবিবার (৯ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদসংস্থা আল জাজিরা প্রকাশ করেছে।
প্রথমে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতের পর থেকে নিহতের সংখ্যা এখন ৬৯,১৬৯ এ দাঁড়িয়েছে। নতুন করে লাশ উদ্ধার ও শনাক্তের ফলে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরে গত মাসেও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই উত্তেজনা কমার পরিবর্তে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবারও নতুন হত্যার খবর এসেছে। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, উত্তর গাজায় তাদের অবস্থানরত সেনাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো এক ফিলিস্তিনি, যেখানে তাদের গুলিতে সে মারা গেছে। জানা গেছে, ওই ব্যক্তি ‘ইয়েলো লাইন’ নামে পরিচিত সীমারেখা অতিক্রম করেছিলেন। এই সীমারেখা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিসহ চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনী যে এলাকা থেকে পিছু হটার কথা বলেছে, সেটি।
ইসরায়েলি সেনারা জানায়, দক্ষিণ গাজায়ও একইভাবে অতিক্রম করেছে আরেক ফিলিস্তিনি, এবং তিনি ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ সৃষ্টি করেছিলেন বলে তারা দাবি করেছে। এমনকি এই সীমারেখার কাছের পরিবারগুলোর ওপরও গুলি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনী ফেলে যাওয়া বিস্ফোরকের কারণে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গাজা ও মিসরের মধ্যে রাফাহ সীমান্ত দ্রুত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪,০০০ ফিলিস্তিনি রোগী রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিসর ও অন্য দেশে চিকিৎসার জন্য প্রবেশ করেছেন। তবে আরও ১৬,৫০০ জন বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছেন।
অন্যদিকে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা অভিযানে ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় বাড়তি সংঘাত দেখা দিয়েছে। এই হামলাগুলোর উদ্দেশ্য মূলত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের জমি থেকে উচ্ছেদ করাই বলে অভিযোগ। শনিবার দক্ষিণ নাবলুসের বেইতা শহরে জল সংগ্রহে ব্যস্ত গ্রামবাসী, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা।
ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী জোনাথন পোলাক আল জাজিরাকে বলেন, মুখোশধারী কিছু বসতি স্থাপনকারী পুলিশ লাঠি ও বড় পাথর নিয়ে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা পাহাড় থেকে নেমে বিশাল পাথর ছুড়ে আমাদের সঙ্গে মারামারি শুরু করে। এই হামলায় অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে এক সাংবাদিক ও একজন ৭০ বছর বয়সী কর্মী রয়েছেন।
প্যালেস্টাইন জার্নালিস্টস সিন্ডিকেট জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে তাদের পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা বলছেন, এটিকে “সাংবাদিক হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে বিবেচনা করছেন।
রাস্তা ও অন্য তথ্যসূত্র নিশ্চিত করেছে, রায়টার্সেরও দুই কর্মী – একজন সাংবাদিক ও তার নিরাপত্তা পরামর্শক – আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস থেকে মোট ৭০টিরও বেশি শহর ও গ্রামে ১২৬টি হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ৪,০০০ এর বেশি জলপাই গাছ ধ্বংস বা উপড়ে ফেলা হয়েছে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে গুরুতর হচ্ছে।

