আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মানবতাবিরোধী অপরাধের সালগীরের রায় ঘোষণার মুহূর্তে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা প্রতিকূলতার মাঝেও সম্ভাব্য রায়কে অগ্রাহ্য করে জনগণের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি এক অডিও বার্তায় বলেছেন, এই অভিযোগগুলো মিথ্যা এবং পরিকল্পিতভাবে তাকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে এক আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাচ্ছে। তিনি জানান, রায় নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ নেই এবং তিনি আবারও মানুষের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন বলে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে উপস্থাপিত অভিযোগ ‘মিথ্যা’ এবং তিনি এ ধরনের রায়কে গুরুত্ব দেন না। মঙ্গলবারের এই অডিও বার্তায় তিনি দাবি করেন, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত মধ্যবর্তী সরকারের লক্ষ্য তাঁর রাজনৈতিক দলকে ‘প্রশমিত’ করা। ৭৮ বছর বয়সী এই নেত্রী আরও বলেন, ‘এটা এত সহজ নয়। আওয়ামী লীগ শেকড় থেকে উঠে এসেছে, কোনও ক্ষমতাদখলকারীর পকেট থেকে নয়।’
এদিকে, সমর্থকদের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিউত্তর তাঁর সাহস আর বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বিশ্বাস দিয়েছে। জনগণ দেখিয়ে দেবে যে, বাংলাদেশ কত দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এই সমস্ত কঠিন সময়েও তারা আমাদের সাথে আছে এবং আমরা সবাই একসাথে থেকে এই সংকট কাটিয়ে উঠব।’
গত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংসতার পর, শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেন এবং তার আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপরই, মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত মধ্যবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং তিনি মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ঢাকায় আদালত হাজিরার নির্দেশ থাকলেও তিনি তা অমান্য করেছেন।
সমর্থকদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘চিন্তা করো না। আমি বেঁচে আছি, থাকব এবং আবারো জনগণের কল্যাণে কাজ করব। দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর আমার বিশ্বাস অটুট।’ যোগ করেন, ‘আমি আর কেউ নয়, দেশের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছি। আমার বাবা-মা, ভাইবোন সবাইকে হারিয়েছি। এই দেশের জন্য আমি সবকিছু করেছি।’
অপরদিকে, শেখ হাসিনা ইউনুসের ক্ষমতা দখলের অভিযোগ তুলে বলেন, সংবিধান অনুসারে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে অপসারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইউনুস পরিকল্পনাভাবে এই কাজটি করেছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত বছরের ছাত্রবিক্ষোভে সরকার সব দাবি মেনে নিলেও, এরপর নতুন দাবি তোলায় উত্তেজনা তৈরি হয়। তার ভাষায়, ‘প্রচুর উদ্দেশ্য ছিল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি, অথচ তারা আমাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে।’
হাসিনা বলেন, ‘ইউনুস সরকারের পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি জগতের মানুষজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে ক্ষমা দিয়েছে, যা অন্যায়। এটি তাদের অপরাধের পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের জন্য বিচারপ্রাপ্তির অব্যাহত পথ বন্ধ করে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রায় দিক বা না দিক, আমার কিছু যায় আসে না। আমি জীবন দিয়েছি আল্লাহর জন্য, আর আল্লাহই নেবেন। কিন্তু আমি সকলের জন্য কাজ করে যাব। দেশের মানুষের জন্য বাধা নয়, বরং এগিয়ে যাওয়ার শক্তি হতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমি এই অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’
অবশেষে, শেখ হাসিনা দেশের উন্নতির জন্য তার দৃঢ় সংকল্পের কথা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে দেশের মানুষ অনেক কিছুই পেয়েছেন। এখন বেকারত্ব বাড়ছে, উৎপাদন কমে যাচ্ছে, শিল্প কারখানা বন্ধ হচ্ছে, ব্যাংক লুটের ঘটনা চলছে—এক কথায়, দেশ বর্তমানে চরম সংকটের মধ্যে। তবে আমাদের সবাইকে একসাথে থেকে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করতে হবে। সবাই ভালো থাকুন। জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ।’

