ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী অরাজকতা দমন করার সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণের বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যখন পুলিশ অরাজকতা ঠেকানোর জন্য কাজ করছিল, তখন তাদের সাথে যে আচরণ করা হয়, তা অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত এবং দুঃখজনক। তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, অফিসারদের সঙ্গে এই ধরনের অশালীন আচরণ এড়াতে।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধনের সময় তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। অপপ্রচারের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যে অসৌজন্যমূলক আচরণ হয়েছে, তা উল্লেখ করে তিনি বললেন, পুলিশ যখন অরাজকতা দমন করতে অপারেশন চালাচ্ছিল, তখন তাদের সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরও বললেন, আমাদের অফিসারদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। আমরা সংঘর্ষে জড়াতে চাই না, বরং নাগরিকসেবা দিতে চাই। যদি একই ধরনের আচরণ চালিয়ে যান, তাহলে সমাজে, শহর ও দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু যদি আবারও একই ধরনের অপ্রিয় ঘটনা ঘটে, তবে এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়াবে। এজন্যই পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু তাদের প্রতি এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিরপরাধ একজন অফিসারকে ককটেল মারতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক। এ ঘটনার ফলে পুলিশের মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং পরিস্থিতির সবরকম ক্ষতি সবাইকেই ভোগ করতে হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, যদি পুলিশ অফিসারদের মনোবল ভেঙে যায়, তাহলে আবারও আমরা ৮ আগস্টের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, যখন একজন ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ লাঠি হাতে শহর পাহারা দিয়েছিলেন।
কমিশনার আরও বললেন, যারা ককটেল ছোড়া বা অন্য ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের এই কাজ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছেন।
আইন অনুসরণের ব্যাপারে সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন তৈরি করে সংসদ, তাই পুলিশ শুধু আইন অনুযায়ী কাজ করছে।
ডিএমপি কমিশনার আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের মোকাবিলার জন্য ডিবির নতুন সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। এই নতুন কেন্দ্রের মধ্যে থাকবে উন্নত প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। নাগরিকরা এখন ফেসবুক, ইমেইল ও ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। তার লক্ষ্য হলো, প্রযুক্তি আধুনিক, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করা।
শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, বর্তমানে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি ও অনলাইন গ্যাংবিলিংয়ের মতো অপরাধগুলো মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক নিরাপত্তাকে গভীর হুমকি দিচ্ছে। সেই কারণে, ডিএমপি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নারী ও কিশোরদের সুরক্ষায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের ও কিশোরদের হয়রানি দ্রুত সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হয়রানির শিকার হলে যেন দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায়, সেটিই তার অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তার দায়িত্ব শুধু পুলিশের নয়, বরং পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

