বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নোট ভারবাল পাঠিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের প্রত্যর্পণের আবেদন জানিয়েছে। এই খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে তাদের total মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়; এরপর বাংলাদেশ এ বিষয়ে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অভিযোগের উল্লেখ, তারা গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমন করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এই রায়ের পরপরই, অন্তর্বর্তী সরকার তেজি ভাষায় দিল্লির কাছে দুই নেতাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির ধারায় ভারত এই বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আছে। তারা সতর্ক করে দেয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের আশ্রয় দিলে তা হবে অস্বীকার্য ও ন্যায়বিচারের পক্ষে অবিচার।
২০১৪ সালে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন, যখন তার সরকার পতন হয়। এরপর থেকে তিনি ভারতের বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। এক বছর ধরে তার প্রত্যর্পণের দাবি উঠলেও, ভারত কোনো সদর্থক সাড়া দেয়নি। বিগত ডিসেম্বরের নোট ভারবালে ভারত জানিয়েছিল, তারা বিষয়টি গ্রহণ করেছে, তবে এখনও কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখায়নি। আইসিটির রায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা রায়টি দেখেছে এবং বাংলাদেশের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য অবস্থান নিয়েছে; তবে প্রত্যর্পণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের কাছে এখন এই ব্যাপারে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। ভারতের গবেষক স্মৃতি এস. পট্টনায়কের মতে, বর্তমান সরকার ‘অস্থায়ী ও সীমিত ম্যান্ডেট’ নিয়ে কাজ করছে, তাই দেড় বছর পর একটি নির্বাচন হলে বিষয়গুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভারতে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিরোধিতা রয়েছেটা বেশ প্রবল, যা রায় ঘোষণার পর আরও বেড়ে গেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে ভারতের স্বার্থে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে, কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা, ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং তার পরবর্তী শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা উল্লেখযোগ্য। এ কারণেই দিল্লি তাকে ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ হিসেবে দেখে। এর ফলে, একজন ‘বন্ধু’কে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি পাঠানো ভারতের জন্য রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়।
তবে ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও, ভারত চাইলে ‘রাজনৈতিক চরিত্রের অপরাধ’ বলে স্বীকার করলে প্রত্যর্পণে আপত্তি করতে পারে। খুন বা হত্যার মতো অপরাধ এই ধারার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ কঠিন। সাথে সাথে, ভারত সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে যে, বিচার প্রক্রিয়াটি ন্যায্য নয় বা ট্রাইব্যুনালের বৈধতায় কিছু জটিলতা রয়েছে। এমনকি, যদি ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া আসে, তবুও দেশে ফিরিয়ে আনাসংক্রান্ত শুনানি হবে ভারতে, যেখানে শেখ হাসিনা তার পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন।
বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ অনেক বড়. এর ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ পরিস্থিতি ২০২৬ নির্বাচনের আগে ভারত সজাগ থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ভারত ধীরে, শান্তভাবে ও সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া উচিত। তবে বাংলাদেশের নির্বাচনীয় প্রচারণা শুরু হলে, রাজনৈতিক রাজনীতির স্বার্থে এই বিষয়ে নেতিবাচক বক্তব্য উঠে আসতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

