কেশব মহারাজের বল সরাসরি বাউন্ডারিতে যেতে চাওয়া মুহূর্তে মোহাম্মদ সিরাজের দৃঢ়তা দেখার মতো ছিল। তখন ভারতের শেষ জুটির ব্যাটাররা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। মিড অন থেকে বল ধরার জন্য দৌড়ঞ্জড়িয়ে মার্কো জানসেনের অবিশ্বাস্য ক্যাচ চোখে পড়ার মতো। তিনি এতটাই দ্রুত বল ধরেন, যেন বিশ্বাসই হয় না, এমন ক্যাচ সম্ভব! এই দুর্দান্ত ডুয়েটে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসকে ১৪০ রানে অলআউট করে, গ্রাউন্ডে ৪০৮ রানের বিশাল জয় অর্জন করে। এটি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় একটি জয় ভারতীয় কন্ডিশনে— ঘরের মাঠে টানা দুই টেস্টে ভারতের হার। এই অসাধারণ সাফল্য দিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রোটিয়ারা। তারা ২-০ ব্যবধানে ভারতের হোয়াইটওয়াশ করল, যা ২৫ বছর পর প্রথমবার ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়। ২০০০ সালে হ্যান্সি ক্রনিজের অধীনে প্রথমবার তারা ভারতকে জিতেছিল। এখন আবার সেই রেকর্ড পুনরাবৃত্তি করল। বাভুমা অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজে অপরাজিত থাকলেন, ১২ টেস্টে তার ১১টি জয়।
উল্লেখ্য, ভারতের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪৯ রানের বিশাল লক্ষ্য ছিল। প্রথম দিন ড্র করাই ছিল যেন তাদের লক্ষ্য, কারণ তারা জয় বা হারে ভাবেনি। শেষ দিনে তাদের হাতে ছিল ৮ উইকেট। ম্যাচের প্রথম দিকে ভারত ২ উইকেটে ২৭ রানে শুরু করে, কিন্তু ১৩ রান যোগের সাথে সাথেই তাদের ব্যাটিং ভেঙে পড়ে। সিমন হারমার প্রথম সেশনের মাঝামাঝি সময়ে কুলদীপ যাদব ও ধ্রুব জুরেলকে আউট করেন এক ওভারে, এরপর তিনি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ঋশাভ পান্তকেও আউট করেন। ফলে ভারত ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
তবে সাই সুদর্শন ও রবীন্দ্র জাদেজার কঠোর প্রতিরোধ শুরু হয়, যা ভারতকে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়। ১৩৮ বল খেলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন সুদর্শন, আর জাদেজা ৪০ বলের মধ্যে ২৩ রানে টিকে থাকেন। এতক্ষণে চা বিরতিতে যাওয়া সময় ছিল। আবার ফিরে আসার পর দ্বিতীয় সেশনের প্রথম বলেই এই জুটি ভেঙে যায়। সেনুরান মুথুসামির বলের এজে জাদেজা ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ১৩৯ বলে ১৪ রানে। এরপর, ৯৯ বলে ৩৭ রান সংগ্রহ করেন মার্ক্রাম। এই জুটিটি ভাঙেন ডানেডিনের আড়ালের একজন ক্রিকেটার।
তারপরও ওয়াশিংটন সুন্দর ও জাদেজা তাল মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যান বিনাবাধায়। ওয়াশিংটন ৭৭ বলের মধ্যে ৩৫ রান করে মার্ক্রামের শিকার হন। তার ক্যাচটি বিশ্ব রেকর্ডে যোগ হয়। এক টেস্টে সর্বোচ্চ ক্যাচ নেওয়ার এই রেকর্ড এখন দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডার মার্ক্রামের দখলে। এটি ছিল তার পঞ্চম উইকেট। পরের ওভারে নিতিশ রেড্ডি গুজবের জন্য ঝামেলায় পড়েন। কাইল ভেরেইন্নার ক্যাচে তিনি আউট হন।
জাদেজা ফিফটি করেছেন, কিন্তু দলের সঙ্গ দেওয়া তাই পারছেন না। পরে, তার বাকি উইকেটগুলোও পড়েছে পরের ওভারে। মহারাজের শিকার হন জাদেজা এবং সিরাজ। হারমার ২৩ ওভার বল করে ৩৭ রানে ছয় উইকেট নেন এবং ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯ উইকেট লাভ করেন। দুই ম্যাচে মোট ১৭ উইকেট নিয়ে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় তিনি।
অন্যদিকে, ম্যাচের সেরা হিসেবে জেনসেনের নাম উঠে আসে। তিনি ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করেন এবং দ্বিতীয় ইনিংসেও ৬ উইকেট শিকার করেন। দুই ইনিংসে তার সংগ্রহ মোট সাত উইকেট। এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তারকা তিনি।

