দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সতর্ক করে বলেছেন, দেশে একটি বড় ধরনের ‘রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকম্প’ আসন্ন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। ড. দেবপ্রিয় জানান, সম্প্রতি একটি বড় ভূমিকম্প দেখেছেন সবাই, কিন্তু এর চেয়ে বড় বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেটি হলো রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে গোপন খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ও পুঁজি ঘাটতির সংকটগুলি একের পর এক সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকের শরীরে এখন অনেক রোগ বাস করছে, যা আগে জানা যায়নি। বিনিয়োগ স্থবির, নীতিগত স্বচ্ছতা কম ও প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় অর্থনীতির ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে জানান, এ ধরনের সংস্কার কার্যক্রমে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম সরকার রিলেরেসের মতো দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, কিন্তু তারা দৌড়াতে দৌড়াতে লাঠি ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এখন তারা লাঠি ছাড়া দৌড়াচ্ছে, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয়। মিডিয়া সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও শ্বেতপত্র অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য তিনি সমালোচনা করেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের পুঁজিবাজার প্রায় ৫০ শতাংশ ডাউনের মধ্যে থাকলেও এর অঙ্ক কেবল তখনি টের পাওয়া যায় যখন এই বাজার সম্পূর্ণই অনাথের মতো হয়।’ তিনি আরো বলেন, দেশের ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে তিনি বেইলআউট বলে আখ্যায়িত করেন। অনুষ্ঠানে ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, সাবেক সচিব ফারুক হোসেনসহ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরও জানান, বড় সংস্কার ছাড়া মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে বড় বিদেশি বিনিয়োগ আনার ঘোষণা বাস্তবসম্মত নয়। নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (এনডিএ) নামে স্বচ্ছতা বিফল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, অংশীজনদের সম্পৃক্ত না করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো টেকসই হয় না। অতীতের সরকারের অস্বচ্ছ চুক্তির কারণে মানুষের সন্দেহ এখনো কাটেনি। পলিসি রেট কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় হলেও সংকোচনমূলক নীতি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ফেরাতে হলে জ্বালানি ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এবং ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা দূরকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।

