চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী রেল কারখানার বিপরীত দিকের অফিসে আবারো চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা দায়িত্ব ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবের প্রমাণ যেন। গত বৃহস্পতিবার অফিস বন্ধের পরে, কর্মরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে অফিস সরঞ্জামাদি তালা বন্ধ করে চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) অফিস খুলতেই দেখা যায়, বেশ কিছু কম্পিউটারের পাশাপাশি কম্পিউটার পার্টস ও অন্যান্য অফিস সরঞ্জাম চুরি হয়ে গেছে। চুরির স্থান ছিল টিনের চাল খুলে ভিতরে প্রবেশের মাধ্যমে। ঘটনাস্থলে গিয়ে একজন অফিস স্টাফ চুরি হওয়া সামগ্রী ও চুরির স্থান দেখেন এই প্রতিবেদককে। হিসাব কর্মকর্তা মো. ফখরুল আবেদিন জানালেন, এখনই কেমন ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক পরিমাণ বলা যাচ্ছে না, তবে তার টেবিলের উপকরণও চুরি হওয়ায় তিনি কাজ করতে অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সিনিয়র স্যারের সঙ্গে দেখা করে আরও তথ্য জানানো প্রয়োজন।’ একই সময় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট সালামত উল্লাহ জানান, এই অফিসের বিষয়টি তাদের অধীনে নয়, বরং এটি অফিসের নিজের দায়িত্ব। তিনি বলেন, ‘অফিসের পাহারার জন্য আমাদের সদস্যরা দায়িত্বরত নয়।’ অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়তলী কারখানার অধীনে ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ফান্ড অফিসের দায়িত্বে থাকা তিন জনের ডিউটি লোক থাকলেও ব্যবস্থাপকরা একজনের বেশি ডিউটি দিচ্ছেন না। একই সঙ্গে, অবহেলা ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য অনেকেই দায় চাপাচ্ছেন। উপ অর্থ ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা সুগ্রীব চাকমা বলেন, ‘রেলওয়ের সমস্ত মালামাল ও অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্ব রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর। তবে চুরির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি, বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে স্পষ্ট করা প্রয়োজন।’ সালামত উল্লাহ আরো জানান, অফিসে চৌকিদার নেই, ফলে বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন না—এই প্রশ্নের উত্তরে হিসাব কর্মকর্তা মো. ফখরুল আবেদিন বলেন, ‘অফিসে চৌকিদার রাখার কোনো পজিশন নেই। আগে এমন পরিস্থিতিও হয়েছিল, তিন মাস পূর্বেও চুরির শনাক্তের ঝুঁকি ছিল।’ তবে যতই বলা হোক, কার্যত রেলের সম্পদ ও নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, অফিসের নিরাপত্তার দিকেও অনেক ঝুঁকি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগত লোকজন মাসিক চুক্তিতে থাকছেন, জুয়ার আসর বসছে এবং সরকারি কোয়ার্টারগুলো বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে—এসব অভিযোগও উঠেছে। অনেকের মতে, এইসব কার্যকলাপে চাপা পড়ে থাকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অবহেলা। পোষ্টিং হাবিলদার নাজমুল হক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিজেও এখানে থাকতে চাই না, কাজের পরিবেশ খুবই খারাপ। পরিবার-বন্ধুবান্ধবরা এখান থেকে বদলী চায়।’ পরিস্থিতি এমন যে, প্রায়ই এই কারখানায় চুরি, দালাল চক্রের কার্যকলাপ ও নিরাপত্তা জোরদার না থাকায় কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এর আগে অনেকবার চীফ কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলামকে বিষয়গুলি জানানো হলেও তিনি তাদের গুরুত্ব দেননি বা বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি ছুটিতে থাকায় আসল পরিস্থিতি জানা ও সমাধানে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পাহাড়তলীর এই রেল অফিসের নিরাপত্তা ও সেবা মানের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে।

