প্রস্তুত বিএনপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আবারও নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জনগণের দৃষ্টিতে আসতি হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা জানান।
তিনি মন্তব্য করেন, দুর্নীতি কিভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তা বোঝার জন্য দূরের কোনও বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা গ্র্যাজুয়েটের সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবেন কেমন করে যোগ্যতা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছেন না। কৃষকদের জন্য মাসের পর মাস ধরে সরকারি পরিষেবা পেতে যে কী কষ্ট হয়, সেটাও বেশ স্পষ্ট। হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কিভাবে ভোগান্তির শিকার হন, তা সকলের জানা। আবার ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে ঘুষের জন্য যে কত ভোগান্তি হয়, তার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
তারেক রহমান বলেন, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভাল শিক্ষার অভাব, সড়ক নিরাপত্তার কারণ—সবই মূলত দুর্নীতির ফসল। এসব কারণে লাখো মানুষের জীবন আজ দমে গেছে। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয়, এটি বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আমাদের সেই সংগ্রামের স্মরণ করিয়ে দেয়, যত সময় বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে উন্নতি করেছিল, সেই সময়টি মূলত বিএনপির শাসনামলেই ছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিল। এর মধ্যে রয়েছে, জিয়াউর রহমানের প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পরিচ্ছন্ন সরকারি সেবা, অর্থনীতির মুক্তির জন্য উদ্যোগ নেওয়া। তারেক রহমান বলছেন, খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন, নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর অর্থনৈতিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা, আর সরাসরি নজরদারির মাধ্যমে দুর্নীতি কমানোর প্রয়াস চলছিল। ২০০৪ সালে গঠিত হয়েছে ‘দুদক’—একটি স্বাধীন কমিশন, যেখানে সরকারের হস্তক্ষেপ সম্ভব নয়। এসময় বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতে, এটি বাংলাদেশের জবাবদিহির জন্য বড় অগ্রগতি।
বিএনপি নেতার মতে, টিআইবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে দুর্নীতি কমে এসেছে—এটাই ছিল বিভিন্ন সংস্কার ও উদ্যোগের ফলাফল। বৃহৎ পরিবর্তনের জন্য বিএনপি গর্ব করতে পারে বলে তিনি দাবি করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষ্য হলো:
• শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা: বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানি লন্ডারিং বিরোধী আইন।
• স্বচ্ছ ক্রয় ব্যবস্থা: প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র, নিয়মিত সরকারি কেনাকাটার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া।
• মুক্ত বাজার অর্থনীতি: টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন খাত, যেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ার সাথে সাথে দুর্নীতি কমবে এবং সাধারণ মানুষের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
• ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: প্রশাসনকে সহজ ও স্বচ্ছ করে তুলে বেশি মানুষের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিএনপির রেকর্ডই সবচেয়ে বেশি সফলতা নিয়ে এসেছে। তিনি ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে বললেন, যাতে আরও শক্তিশালীভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালানো যায়, তার জন্য কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে:
• প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা সুরক্ষা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান যেন রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়।
• সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল-টাইম অডিট, শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।
• বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশ, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণের ব্যবহার।
• ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট সব কিছু অনলাইনে এনে দুর্নীতি কমানোর পরিকল্পনা। (বিশ্বমানের সূচক অনুযায়ী, এর মাধ্যমে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ দুর্নীতি কমতে পারে)
• হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা: যারা অনিয়ম তথ্য ফাঁস করে তারাই নিরাপদ থাকবেন।
• নৈতিক শিক্ষা: স্কুল ও কলেজে সততার মূল্যবোধ শিক্ষাদান নিশ্চিত করা।
• শক্তিশালী আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: ডিজিটাল ব্যয়ের ট্র্যাকিং, স্বাধীন অডিট ও সংসদের তদারকি।
বহু বছরের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিতে দুর্বার সংগ্রাম কঠিন, কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, সৎ নেতৃত্ব, নিখুঁত শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন থাকলে পরিবর্তন অসম্ভব নয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়, বিএনপি আবারও সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে প্রস্তুত।
শেষে, তিনি টিআইবির ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের সময় দুর্নীতির সূচকের তথ্যসমৃদ্ধ চিত্রও তুলে ধরেছেন।

