বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন নির্বাচনের পর পদত্যাগের পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রকাশ করেন, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি অপমানিত বোধ করছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক থাকলেও, মূল কার্যনির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার হাতেই থাকে। তার পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক হলেও, রাজনীতির এই অস্থির সময়ে এটি গুরুত্ব বহন করে।
প্রায় বছরখানেক আগে, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন, তবে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি চাই আমি এই পদ থেকে চলে যেতে। আমি সরকারের দায়িত্ব পালন শেষে এখন বাইরে যেতে পেরে খুশি হব। তিনি আরও যোগ করেন, আমার থাকা উচিত ছিল নির্বাচনের আগে, তবে বর্তমানে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি সেজন্য প্রস্তুত।
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। তার কথামতো, গত সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে তার প্রতিকৃতি সরিয়ে নেয়া হয়েছে, যা তাঁকে ভীষণ অপমানিত করে। তিনি বলেন, সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনের প্রতিকৃতি এক রাতে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, যা মানুষ বুঝতে পারে যে হয়ত তাঁকে সরানোর উদ্দেশ্য।
সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রয়োজনে তিনি ইউনূসকে চিঠিও লিখেছেন, কিন্তু এর কোনো ফল হয়নি। তার মতে, তিনি ঘটনার কারণে কণ্ঠরোধের শিকার এবং মূল্যবান কিছু বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন।
তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে, যিনি স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি ক্ষমতা দখলের কোনো পরিকল্পনা করছেন না। বাংলাদেশে আগেও সামরিক শাসনের ইতিহাস থাকলেও, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চান।
প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, তার পদত্যাগে দেশের কিছু ছাত্র আন্দোলন ছিল, তবে সম্প্রতি কোনো রাজনৈতিক দল এই দাবি করেনি। একাধিক জনমত জরিপের বলছে, পরবর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে থাকবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি কি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে সাহাবুদ্দিন জানান, তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে চান না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি স্বাধীন ছিলেন এবং এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।

