গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (গাকৃবি) একটি দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির ক্ষয়ক্ষতি এবং বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবেলার জন্য রিজেনারেটিভ কৃষিকে ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম মূল সমাধান হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বেগম সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে ‘Regenerative Agriculture for Food Security’ শীর্ষক এই বৈশ্বিক এক আয়োজনের শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। মূল আলোচনাগুলোর মধ্যে ছিল বিজ্ঞান ভিত্তিক নতুন চিন্তা ও প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষিকে টেকসই ও জীবন্ত রাখা। এতে দেশের পাশাপাশি বিদেশের খ্যাতনামা গবেষক, নীতিনির্ধারণকারী, শিক্ষাবিদ এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন, যারা আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসীহুর রহমান, এসজিপি, এসপিপিএম, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি। এ ছাড়াও, আন্তর্জাতিক কৃষি প্রযুক্তি সংস্থা অ্যাগ্রোস্পেস-এর প্রধান ড. স্টিফেন মান গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথিরা ছিলেন ড. স্টিফেন ময়নুল হক এবং পাকিস্তানের ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাহাওয়ালপুর-এর অধ্যাপক ড. ওয়াজিদ। সম্মেলনে গাকৃবি’র বিভিন্ন অনুষদের ডিন, পরিচালক, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর এবং দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন গবেষক অংশগ্রহণ করেন। মোট ১০টি থিমে গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়, যেখানে রিজেনারেটিভ কৃষি প্রযুক্তি, মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু-সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির আধুনিক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়। সমাপনী অধিবেশনে গবেষণাগুলোর সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ড. মিজানুর রহমান। এর পরে, অতিথিরা ও গবেষকরা তাদের প্রকাশিত গবেষণার জন্য ওরাল, পোস্টার ও ফ্ল্যাশ ক্যাটাগরিতে অসাধারণ পারফরম্যান্সে পুরস্কার লাভ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ মাসীহুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রিজেনারেটিভ কৃষি ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। তার মতে, এসব গবেষণার বাস্তবায়ন কৃষি খাতকে আরও টেকসই করবে। উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মাটির অবক্ষয় মোকাবিলায় রিজেনারেটিভ কৃষি গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সম্মেলন এক অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ থেকে পাওয়া গবেষণাগুলো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে অর্গানাইজিং কমিটির কনভেনর ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. সফিউল ইসলাম আফ্রাদ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন। আয়োজনকারীরা বলছেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন নতুন গবেষণা, উদ্ভাবন, নীতিগত আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে রিজেনারেটিভ কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

