পাঁচটি মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সম্প্রতি সরকারি সিদ্ধান্তে কিছু রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা ভোটাধিকার থেকে বৃহৎ অংশের ভোটারদের বঞ্চিত করতে পারে। এই চিঠিতে তারা স্পষ্টত উল্লেখ করেন যে, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অবাধ, সুষ্ঠু ও বাইরেক্টর নির্বাচনের আয়োজন জরুরি।
চিঠিটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে। এতে কোনো বিশেষ দলের নাম উল্লেখ না থাকলেও, উল্লেখ করা হয় যে, অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার বিষয়ক কিছু সিদ্ধান্ত উদ্বেগ তৈরি করেছে। তারা আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলাকালীন এই আহ্বান জারি হয়, যখন সরকার বিরোধী দল শাসনামলে একাধিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগও রয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে ক্ষমতা দখলের জন্য পরিচালিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয় এবং দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ আনা হয়। আন্তর্জাতিক আদালতেও শেখ হাসিনা ও বয়ঃকালীন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারের পতনের পর, ২০২৪ সালে নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এক অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা থাকলেও, অভিযোগ এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টে বর্ণিত হয়েছে, ২০২৪ সালে জুলাই ও আগস্টে সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এসব বিষয় জাতীয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রতিশোধের পথ নয় বরং সুবিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা দরকার।
এছাড়াও, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করে কংগ্রেস সদস্যরা বলেন যে, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অপরাধীদের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা ও ট্রাইব্যুনালের সংস্কার জরুরি। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত বা অন্য পদক্ষেপগুলো জনআস্থা ও জরুরি রাজনৈতিক সংস্কার বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়।
সবশেষে, তারা জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার মূল্যবান এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের নেতা নির্বাচনের অধিকার রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে অংশীজনের সম্পর্ক রাখার জন্য প্রস্তুত এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়ন সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

