বগুড়ার শিবগঞ্জের গাঙনগর আলে মাহমুদ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭৫তম বর্ষপূর্তি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সোনাতলার ঐতিহ্যবাহী আকন্দ পরিবারের সদস্য আলে মাহমুদ আকন্দ। তখন তিনি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করেন গাঙনগর আলে মাহমুদ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতি বছর বছর পেরোতে পেরোতে, সম্প্রতি ২০২৫ সালে উদযাপিত হলো এ বিদ্যালয়ের ৭৫তম বর্ষপূর্তি, যা প্লাটিনাম জুবিলী হিসেবে পালিত হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, এ বিশেষ অনুষ্ঠানে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে হাজারো বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানসভা এক মিলনমেলায় রূপ নেয়।
উপস্থানে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্যরা, যারা তাদের অভিজ্ঞতা ও স্বপ্নের কথা শেয়ার করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি পদে কর্মরত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুরআন তেলাওয়াত এবং গীতা পাঠের মাধ্যমে। এরপর আলোচনা সভা হয়, যেখানে সমবেত ছিলেন সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী আকন্দ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এমদাদুল হক। বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের পর, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিখ্যাত সংগ্রামী ও স্বপ্নদর্শী এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ আলো। এই অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী ঐতিহ্যবাহী ব্যক্তিত্বদের, তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালিত হয়।
প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য এবং সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম আকন্দ বলেন, ‘আমার প্রয়াত দাদা আলে মাহমুদ আকন্দ এই অঞ্চলের শিক্ষার বিস্তারে বিরাট অবদান রেখেছেন। তার উদ্যোগের কারণে আজ এই প্রতিষ্ঠান জেলা সেরাদের মধ্যে শীর্ষে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আলে মাহমুদ আকন্দের দেখানো পথে এগিয়ে চলতে পেরে আমি গর্বিত।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন, যিনি ১৯৬৬ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। নূর আহমেদ, ৮৬ ব্যাচের ছাত্র, আজ একজন সফল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। মাঝপাড়ার স্কুলছাত্রী কুমারী বর্ষা রানী জানিয়েছেন, প্রাক্তন বড় ভাই-বোনেরা এখানে এসেছেন দেখে খুব ভালো লাগছে।
গাঙনগর আলে মাহমুদ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ২০১২ সালে শিক্ষা ক্যাম্পাসে যোগদান করেন। বর্তমানে সেখানে মোট ১ হাজার ৪৪ জন ছাত্র/ছাত্রী লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ের অনেক প্রাক্তন ছাত্র আধুনিক যুগে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন, যেমন আশুতোষ সরকার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে একজন সফল কৃষি বিজ্ঞানী হয়ে রয়েছেন। নূরুজ্জামান সঞ্চয় সিরাজগঞ্জের এক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এবং দুদকেও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য, শিক্ষাবিদ রেজাউল করিম মানিক, গাজী সালাউদ্দিন তানভীর, আবুল কালাম আজাদ (পুটু), শফিকুল ইসলাম, সোনাতলা সদর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বেলালসহ শিক্ষকগণ, ও বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এটি একটি স্মরণীয় দিন, যা আমাদের প্রজন্মের জন্য তাজা স্মৃতি হয়ে থাকবে।

