স্বর্ণের দাম আজ সোমবার ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৪০০ ডলার অতিক্রম করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কমার প্রত্যাশা এবং নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বাড়ার কারণে স্বর্ণের মূল্য দ্রুত বাড়ছে। একই সময়ে, রুপার দামও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
আজ ভোরে বিস্তারিত বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সোনার বর্তমান মূল্য ১ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি আউন্স ৪,৩৯৭ ডলার ১৬ সেন্টে পৌঁছেছে। দিনের শুরুতেই কিছুটা উল্লম্ফন ঘটে, ফলে দাম এক দফা ৪ হাজার ৪০০ ডলার অতিক্রম করে ৪,৪০০ দশমিক ২৯ ডলারে গিয়ে পৌঁছায়, যা নতুন এক রেকর্ড। অপরদিকে, রুপার মূল্যও ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৬৯,৪৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা রুপার ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।
ফেব্রুয়ারি মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বর্ণের ভবিষ্যৎ চুক্তির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, প্রতি আউন্স ৪,৪৩০ ডলার ৩০ সেন্টে। এই ভবিষ্যৎ চুক্তি অর্থাৎ, স্বর্ণের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ, নির্দিষ্ট দামে ও ভবিষ্যতের নির্দিষ্ট তারিখে কেনাবেচার জন্য চুক্তি।
এখন পর্যন্ত, এ বছর স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৭ শতাংশ বেড়েছে, যা ইতিহাসের এক নতুন রেকর্ড। এর ফলে, প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৩ হাজার ডলার ও ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা ১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে বড় বার্ষিক উত্থান হিসাবে দেখা হচ্ছে।
অন্য দিকে, রুপার বাজারেও নাটকীয় উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বছরের শুরু থেকে রুপার দাম ১৩৮ শতাংশ বেড়েছে, যা স্বর্ণের চেয়ে অনেক বেশি। শক্তিশালী বিনিয়োগ প্রবাহ এবং দীর্ঘস্থায়ী সরবরাহ সংকট এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সার্বিক নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধি, ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা এই বাজারে স্বর্ণ ও রুপার মূল্যবৃদ্ধির জন্য গুরুত্ব বহন করছে। স্টোনএক্সের সিনিয়র বিশ্লেষক ম্যাট সিম্পসন জানিয়েছেন, ‘ডিসেম্বরে সাধারণত স্বর্ণ ও রুপার দাম বাড়ে, তাই এই মৌসুমে বাজার পরিস্থিতি সুবিধাজনক।’ তিনি আরও বিশ্লেষণ করেছেন, ‘এই মাসে স্বর্ণের দাম ইতিমধ্যে ৪ শতাংশ বেড়েছে। এখন বছরের শেষ দিকে আসায়, লেনদেন কমে যেতে পারে ও কিছু বিনিয়োগকারী মুনাফা তুলতে চাইতে পারেন, ফলে দাম আরও বাড়তে পারে। সুতরাং, বিনিয়োগকারীদের উচিত সাবধান থাকতে।
রয়টার্সের বিশ্লেষক ওয়াং তাও বলেন, স্বর্ণের দাম আরো বাড়তে পারে এবং তা প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৪২৭ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
বর্তমানে, স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক অস্থিxরতা, বাণিজ্যিক উত্তেজনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ কেনার বিস্তার এবং আগামী বছরে সুদহার কমানোর প্রত্যাশা। পাশাপাশি, ডলারের মান দুর্বল হওয়ার কারণে বিদেশি ক্রেতারা স্বর্ণকে তুলনামূলকভাবে সস্তা মনে করছেন, যা দামে বাড়তি গতি যোগাচ্ছে।
বাজারে এখনো আশা করা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে আগামী বছর দুটি দফা সুদ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যদিও ফেডারেল রিজার্ভ সতর্কতা অবলম্বনের ইঙ্গিত দিয়েছে। উল্লেখ্য, স্বর্ণ সাধারণত চাপের সময় এবং সুদের হার কম থাকলে লাভজনক হয়।
অন্য ধাতুগুলোর মধ্যে, প্লাটিনামের দাম ৪.৩ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৫৭ ডলার ১৫ সেন্টে পৌঁছেছে, যা ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি, প্যালাডিয়ামের মূল্য ৪ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৭৮৬ ডলার ৪৫ সেন্টে পৌঁছিয়েছে, যা প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সূত্র: রয়টার্স

