গাজায় বৃষ্টি ও হাড়কাঁপানো শীতে মানুষের দুর্ভোগ যেন অশেষে পৌঁছেছে। রক্তঝরা যুদ্ধের মধ্যেও প্রকৃতি যেন আরও কঠোর হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে এই উপত্যকায়। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রবল নিম্নচাপের কারণে গাজা উপত্যকায় প্রতিদিনের জীবন ঢেকে গেছে পানির স্তূপে। এই শীতে এটি তৃতীয় দফার নিম্নচাপ হলেও, গতকাল সোমবার আরও শক্তিশালী চতুর্থ দফার ঝড়ের আশঙ্কায় গাজাবাসীরা আতঙ্কে আছে, খবর আলজাজিরার। গাজার এক বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসলাহ কষ্টের সঙ্গে বলতে উল্লেখ করেন, আমাদের ঘরবাড়ি এখন ইসরায়েলের দখলে, আশ্রয় কেন্দ্রেও আমাদের অবস্থা ভালো নয়। সর্বত্র পানির স্রোত। চীনদেশের জাবালিয়া থেকে পালিয়ে আসা চার সন্তানের মা শাইমা ওয়াদি জানান, দীর্ঘ দুই বছর ধরে তাবুতে থাকায় তারা সবাই ক্লান্ত। গদি বা শিশুসাধ্য গরম কাপড়েরও সংকট রয়েছে। এই ডিসেম্বর মাসে তীব্র ঠাণ্ডা ও বৃষ্টির কারণে কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে তিন শিশু রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, ভিজা কাপড় এবং খোলা আকাশের নিচে থাকার ফলে তারা হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মানবিক সংস্থাগুলোর হুঁশিয়ারি, যদি এখনই যথাযথ ত্রাণ এবং আশ্রয় প্রদান না করা হয়, তাহলে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হতে পারে। গাজার সিভিল ডিফেন্সের এক মুখপাত্র ইব্রাহিম আবু আল-রিশ বলেন, বৃষ্টির জল ডুবিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মানুষকে উদ্ধার করতে প্লাস্টিকের তোয়ালে দিয়ে তাবুগুলো ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এর মাঝেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। একদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে সফরে ব্যস্ত, অন্যদিকে ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত। হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারসহ কঠিন শর্তে বন্ধ রয়েছে দ্বিতীয় ধাপের শান্তি প্রক্রিয়া।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় আরও ২৯টি মরদেহ হাসপাতালে এনে করা হয়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১,২৬৬ জনে এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৭១ হাজারের বেশি। এই মানবিক সংকটে জীবন রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।

