চলমান সংকট ও সহিংসতার মধ্যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় ভোরের দিকে ইয়াঙ্গুনের কামায়ুত টাউনশিপে একটি ভোটকেন্দ্রের দৃশ্য দেখা গেছে, যেখানে জান্তা-নিয়ন্ত্রিত এই নির্বাচনে ভোটাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই কেন্দ্রে পৌঁছানোয় দেখা গেছে যে এটি ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া গণতান্ত্রিক নেতা অং সান সু চির বাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অভ্যুত্থানে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে সেনারা ক্ষমতা গ্রহণ করলে থেকে দেশটি সহিংসতার মুখে পড়ে। একটি নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকারকে ধ্বংসের পর, দেশের পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলমান গৃহযুদ্ধ এবং আদ্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন মার্চে বড় ভৌতিক কম্পনের কারণে দেশের মানবিক পরিস্থিতি ভয়ানকভাবে খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে, রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সামরিক জান্তা দেশের খাদ্য সংকটের তথ্য গোপন করতে গবেষক এবং ত্রাণকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, পাশাপাশি সাংবাদিকদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়িয়েছে।
একজন মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। জাতিসংঘের তথ্যমতে, দেশের মানুষদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেছে। দেশের প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ২ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তার জন্য মুখ পেঁাঁচ্ছে। মূল্যস্ফীতি, মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। সংঘর্ষের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৬ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত, আর বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ৬,৮০০-এর বেশি।
এতসব সংকটের মধ্যে আজকের এই নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন পথে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। তবে পরিস্থিতি এখনো খুব জটিল এবং সংশয় হচ্ছে, এই ভোট অপরিহার্য পরিবর্তন আনবে কি না।

