সোমবার (১১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের পূর্ব কাকালদী গ্রামে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন শাহজাহান বাচ্চু (৬০)। দুটি মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করার পর আবার মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। ঘটনার পরপরই সেখানে আসা পুলিশের একজন এএসআই দুর্বৃত্তদের চলে যেতে দেখেছেন।
সিরাজদিখান থানার ওই এএসআই’র নাম মো. মাসুম আলী।
তিনি বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত ডিউটি শেষ করে আমি ওই রাস্তা ধরে মোটরসাইকেলে থানায় যাচ্ছিলাম। এমন সময় একটা শব্দ পাই। আরও কিছু দূর সামনে গিয়ে রাস্তার ওপরে একজন মানুষকে পড়ে থাকতে দেখি। মোটরসাইকেল থেকে আমি নেমে দাঁড়াই। প্রথমে ভেবেছিলাম বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কোনও ব্যাপার। কারণ, পাশেই একটা বিদ্যুতের খুঁটি আছে। এরপর একটু দূরে দেখি একজন (ঘাতক) মোটরসাইকেলে উঠতেছে। আরেকটা মোটরসাইকেলে একজন বসা এবং দুজন দাঁড়িয়ে আছে।’
মাসুম আলী বলেন, ‘‘তখন আমি তো আর প্রস্তুত ছিলাম না। তারা যখন দেখছে পোশাক পরা একজন পুলিশ, তখন তাদের একজন বলে, ‘গুলি করে দে, পুলিশকে গুলি করে দে’। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজের মোটরসাইকেলের আড়ালে অবস্থান নেই। এরপর তারা ব্যাগ থেকে একটা বোমা বের করে রাস্তায় ফাটিয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমি এই ঘটনা জানাই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ঘটনা এত দ্রুত ঘটে যে তারা কী পোশাকে ছিল, কেমন মোটরসাইকেলে চড়েছিল, তাদের চেহারা কেমন ছিল, আমি কিছুই বলতে পারবো না। তবে মোটরসাইকেলের চালকেরা হেলমেট পরা ছিল। ঘটনার পর তারা জংশন রোড ধরে চলে যায়। এরপর কোনদিকে যায়, আমি বলতে পারব না। কারণ, ‘পুলিশকে গুলি কর’ বলার পরে আমি নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমি অস্ত্র বের করার আগেই তারা পালিয়ে যায়। আমি যদি আর ১০ সেকেন্ড আগে সেখানে পৌঁছাতাম, তাহলে হয়তো আমিও মারা পড়তাম।’’
‘ঘটনার পরে আমরা তালতলা, ইছাপুরাসহ আশপাশের এলাকায় খোঁজ করি। কিন্তু ঘাতকদের কোনও ক্লু পাইনি বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ছাত্রজীবনে শাহজাহান বাচ্চু ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পরে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ জেলা সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি পার্টির কোনও পদে নেই।
প্রগতিশীল ব্যক্তিদের হত্যায় উগ্রবাদীদের তালিকায় তার নাম ছিল।
জানা যায়, শাহজাহান বাচ্চু লেখালেখি করতেন। রং ঢং তামাশা নামে তার একটি ছড়ার বই বেশ আলোচিত। তবে ইদানীং তিনি ফেসবুকেই বেশি লেখালেখি করতেন। বিশাকা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ছিলেন শাহজাহান বাচ্চু।