গ্রেফতারের আড়াই মাস পার হওয়ার আগেই জামিন পেলো নব্য জেএমবির সিস্টার উইংয়ের সাবেক প্রধান নারী জঙ্গি হুমায়ারা ওরফে নাবিলা। যাকে সংগঠনে ‘ব্যাট উইমেন’ বলে ডাকা হতো। সে নব্য জেএমবির আরেক শীর্ষ জঙ্গি তানভির ইয়াসিন করিমের স্ত্রী। তানভীর এখনও কারাবন্দি। গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে সে জামিন পায়। বুধবার সন্ধ্যায় কাশিমপুরের মহিলা কারাগার থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কথা। কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ শাজাহান বিকেলে জাগো বাংলা ২৪ কে বলেন, ‘হুমায়ারা ওরফে নাবিলার জামিনের কাগজ পেয়েছি। তার কারামুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।’
গত বছরের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বোমা হামলা চালিয়ে মন্ত্রী-এমপিসহ শতাধিক মানুষকে হত্যার যে পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা, সেই ঘটনার অর্থের জোগানদাতা ছিল তানভীর ও তার স্ত্রী হুমায়ারা। পুলিশি তৎপরতায় হামলায় ব্যর্থ হয়ে সাইফুল নামে এক জঙ্গি পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেই নিহত হয়। এ ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হুমায়ারা ওরফে নাবিলাকে।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, হুমায়ারা তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। তারা নিয়মিত গুলশান এলাকায় হালাকা (একসঙ্গে মিলিত হয়ে সাংগঠনিক আলোচনা করা) করতো। ঢাকার নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা হুমায়ারা ওরফে নাবিলা মালয়েশিয়ার লিংকন ইন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে। সেখানেই তার সঙ্গে নব্য জেএমবির সর্বশেষ আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আকরাম হোসেন নিলয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তারা ঢাকায় ফিরে নব্য জেএমবির সিস্টার উইং নামে একটি শাখা তৈরি করে।
সিটিটিসি সূত্র বলছে, সাংগঠনিক পরিচয়ে বিয়ের পর স্বামী তানভীরসহ একযোগে জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে পড়ে। স্বামী তানভীরকে গত বছরের ১৯ নভেম্বর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরপর থেকে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল হুমায়ারা ওরফে নাবিলা। সংগঠনের সদস্যরা তাকে সাহসী নারী হিসেবে ‘ব্যাট উইমেন’ বলে ডাকতো। এমনকি নব্য জেএমবির নিজেদের যোগাযোগ মাধ্যমেও তার নাম ব্যাট উইমেন ছিল।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতারের পর কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল হুমায়ারা ওরফে নাবিলাকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে সবকিছু স্বীকার করলেও আদালতে গিয়ে বিচারকের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়নি। তবে সাক্ষী হিসেবে তার এক খালাত ভাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, এভাবে শীর্ষ ও দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা একের পর এক জামিনে বেরিয়ে গেলে জঙ্গিবাদ কার্যক্রম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। গত কয়েক মাসে এমন অনেক জঙ্গি জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। এমনকি সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের হয়ে জিহাদ করতে বাংলাদেশে যারা তরুণ যোদ্ধা সংগ্রহ করতো, তাদের মূল হোতা ব্রিটিশ জঙ্গি সামিউন রহমানও গত বছর জামিনে বেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে ধরা পড়ে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর পুলিশের তৎপরতায় জঙ্গি কার্যক্রম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরমধ্যে নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের অনেক সদস্য গ্রেফতার ও বিভিন্ন অপারেশনে নিহত হয়। কিন্তু সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করা হয়। একারণে জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা নতুন করে আবারও জঙ্গি হামলার শঙ্কা করছেন। এরমধ্যেই শীর্ষ জঙ্গিরা জামিনে বেরিয়ে আসলে হামলা ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘আত্মগোপনে থাকা একজন জঙ্গিকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা অনেক সময়ের ব্যাপার। জঙ্গিরা সাধারণ অপরাধীর মতো নয়। একারণে সহজেই যদি জঙ্গিরা জামিনে বেরিয়ে যায় তাহলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।’
এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া মামলার অন্তত ৫ জন আসামি জামিনে বের হয়ে গেছে। একজন বাদে বাকি চার জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে। তারা হলো শাহবাগ থানার ৩৬(৯)১৭ নম্বর মামলার আসামি হুমায়ুন, জয়দেবপুর থানার ১৩ (৭)১৭ নম্বর মামলার আসামি জুয়েল হোসেন, কাফরুল থানার ২৫(৪)১৮ নম্বর আসামি আমিনুর রহমান ও কলাবাগান থানার ১৫(৮)১৭ নম্বর মামলার আসামি হুমায়ারা ওরফে নাবিলা। অন্যি আসামি জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবর রহমানও বুধবার জামিনে বের হন।