আগামী জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী-বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে ফোনালাপের পরও সংলাপ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রধানমন্ত্রী দুই দফা ফোন করার পরও বিএনপির আরেক দফা ফোন প্রত্যাশা করছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু সরকার দলের নেতারা বলছেন, এখন সৌজন্যের খাতিরে বিরোধীদলীয় নেতার ফোন প্রত্যাশা করছেন তারা। কিন্তু এই দুই প্রত্যাশার মধ্যে ফোন করেনি কেউ।
গত শনিবার বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন হরতাল শেষে ৩০ অক্টোবর আলোচনায় বসতে রাজি আছেন তিনি। আওয়ামী লীগ ধারণা করেছিল হরতাল শেষে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেবেন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে বিএনপি চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আবার তাদের ফোন করুক। কিন্তু হরতালের পর একদিন কেটে গেলেও কেউ কাউকে ফোন করেননি। এ পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সংলাপ নিয়ে।
প্রবীণ আইনজীবী রফিকুল হক মনে করেন, দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই দুইনেত্রীকে এক জায়গায় আলোচনায় বসতে হবে। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘আজ হোক কাল হোক দুই নেত্রী সংলাপে বসবেন বলে আমি মনে করি। তা না হলে দেশ উচ্ছন্যে যাবে।’
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সংলাপের জন্য তাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন এমন নিশ্চয়তা দিলেই আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেবে বিএনপি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাদের আলোচনার জন্য যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তা সর্বদলীয় সরকারের বিষয়ে। তাই ওই আলোচনায় গিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রুহুল কবির রিজভী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেবেন কি না সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আলোচনার জন্য যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রী আলোচনার আগেই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। এভাবে শর্ত দিলে তো আর সংলাপ সম্ভব হবে না।’
এদিকে বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বিরোধীদল যেকোনো সময় গণভবনে আলোচনার জন্য আসতে পারে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তা এখনও বহাল রয়েছে।’
গত শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। এসময় তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকে ২৮ অক্টোবর রাতে গণভবনে নৈশভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু বিএনপি নেত্রী হরতালের কারণে ২৮ অক্টোবর গণভবনে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান। তবে ২৯ অক্টোবরের পর যেকোনো সময় আলোচনায় বসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানালে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন হরতাল প্রত্যাহার করা সম্ভব না।
এদিকে দুই নেত্রীর মধ্যে দীর্ঘ ৩৭ মিনিটের ফোনালাপের কথোপকথন ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফোনালাপটি প্রচার করার পর সরাসরি সংলাপের সম্ভাবনা আগের চেয়ে কমে গেছে। কারণ, ফোনলাপের অডিও রেকর্ডটি প্রচার করাকে রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। যা নিয়ে দুই দলের মধ্যে নতুন করে দূরত্ব সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে।