ফুটবল বিশ্বের সেরা তারকাদের লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। প্রস্তুত ৩২টি দেশের খেলোয়াড় ও ভক্ত-সমর্থকরা। গ্যালারি ও টেলিভিশনে চোখ রাখবেন শত কোটি মানুষ। প্রস্তুত রাশিয়ার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামও। কারণ এই স্টেডিয়ামেই যে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা উঠবে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের। জয়-পরাজয় ছাড়াও বিশ্ব মঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহের কমতি থাকে না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকবে তা নিয়ে জানার আগ্রহ থাকে অনেকের।
রাশিয়া বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে কি কি থাকছে সেটা নিয়ে আগ্রহ সব বয়সী ফুটবলপ্রেমীর। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে কোন কোন সেলিব্রেটি উদ্বোধনী মঞ্চে পারফর্ম করবেন সেটা জানার আগ্রহ তো আছেই। কোটি কোটি টেলিভিশন দর্শকদের সামনে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখাতে প্রস্তুত আয়োজক দেশ রাশিয়া। নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবে তারা। মাঠে বসে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ এই অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ফিফা বিশ্বকাপের ২১তম আসর।
বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হবে রাশিয়া-সৌদি আরবের উদ্বোধনী ম্যাচ। তার দুই ঘণ্টা আগেই শুরু হয়ে যাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে ম্যাচগুলো সরাসরি দেখাবে বিটিভি, মাছরাঙা ও নাগরিক টিভি।
কিছুদিন আগেই রাশিয়া বিশ্বকাপের থিম সং ‘লিভ ইট আপ’ প্রকাশ করেছে ফিফা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থিম সংটি গেয়ে শোনাবেন নিকি জ্যাম, উইল স্মিথ ও ইরা ইস্ত্রোফি। তাদের সঙ্গে গলা মেলাবেন হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা উইল স্মিথ। স্টেডিয়াম আর টেলিভিশনের দর্শকদের গানে মাতিয়ে রাখবেন গ্লোবাল মিউজিক আইকন রবি উইলিয়ামস, রাশিয়ার শিল্পী আইদা গারিফুলিনা এবং চমক হিসেবে থাকবেন ১৯৯৪ আর ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালডো। এছাড়া মাঠে প্রায় ৫০০ নৃত্যশিল্পী ও ক্রীড়াবিদ উপস্থিত থাকবেন। তারা নৃত্যের ছন্দে রাশিয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরবেন।
পপ সঙ্গীতের সুপারস্টার রবি উইলিয়ামস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে উচ্ছ্বসিত, ‘এমন একটি ইউনিক পারফরম্যান্সের জন্য রাশিয়ায় পুনরায় যেতে পেরে আমি খুবই খুশি ও উচ্ছ্বসিত। আমার গোটা ক্যারিয়ারে আমি অনেক কিছু করেছি, অনেক জায়গায় গেয়েছি। কিন্তু ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাঠে উপস্থিত ৮০ হাজার দর্শক ও টেলিভিশনের সামনে বসা মিলিয়ন মিলিয়ন দর্শকের সামনে পারফর্ম করতে পারাটা আমার শৈশবের স্বপ্ন। আমি ফুটবল ও সঙ্গীত ভক্ত-অনুরাগীদের আমন্ত্রণ জানাবো যে রাশিয়া আসুন। একসঙ্গে স্টেডিয়ামে পার্টি হবে। যারা স্টেডিয়ামে আসতে পারবেন না তারা একটু আগেই টেলিভিশন সেট চালু করে রাখুন অবিস্মরণীয় শো দেখতে।’
এদিকে, উচ্ছ্বসিত আইদা গারিফুলিনা জানিয়েছেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি যে বিশ্বকাপের মতো একটি ইভেন্টের অংশ হতে পারব যেটা আমার নিজ শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশাল একটি স্বপ্ন সত্যি হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মূলত সংগীত নির্ভর করার ব্যাপারে জোর দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর রেড স্কোয়ারে আরেকটি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে অপেরা তারকা প্ল্যাসিডো ডোমিঙ্গুয়েজ ও জুয়ান দিয়েগো ফ্লোর্সের মতো তারকারা পারফর্ম করবেন। আয়োজক রাশানরা জানিয়েছে, ক্ল্যাসিক্যাল ঢংয়ে গানে মাতানো হবে দর্শকদের। ফলে, সব দেশের মানুষ গানের কথা বুঝতে সক্ষম হবে। ইংলিশ টেলিভিশন আইটিভি পুরো অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে, যার মাধ্যমে স্টেডিয়ামের বাইরে থাকা কোটি কোটি দর্শক অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ করার সুযোগ পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালডো জানিয়েছেন, ‘উদ্বোধনী ম্যাচটি সবসময়ই একটি প্রতীকী ম্যাচ। এটা এমন একটি মুহূর্ত, যখন আপনি বুঝতে পারেন যে মুহূর্তটির জন্য একজন ফুটবলপ্রেমী কিংবা একজন ফুটবলারকে চার বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে তা এসেছে। কেউ জানে না টুর্নামেন্টের এই চার সপ্তাহে কি হবে, কিন্তু সবাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে এটা স্মরণীয় হবে। অবশ্যই এটা আয়োজক রাশিয়ার জন্য আবেগের একটি মঞ্চ। এতদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর শেষ পর্যন্ত আপনার উঠোনে সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীরা জড়ো হবে, যারা সত্যিই ফুটবলকে ভালোবাসে। আমি সেটা চার বছর আগে ব্রাজিলে অনুভব করেছি এবং এখন আমি সেই আনন্দটা রাশিয়ানদের সাথে ভাগাভাগি করতে পারব বলে আনন্দ বোধ করছি।’