বিশ্বকাপের বাকি আর ৭ দিন। রাশিয়ার ফুটবল মহাযজ্ঞে দলীয় পারফরম্যান্সের দিকে তো বটেই, ফুটবলপ্রেমীরা আলাদা নজর রাখবেন নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড়ের ওপরও। যারা প্রতিপক্ষের মনে ভয় ছড়িয়ে পূরণ করবেন নিজ দলের প্রত্যাশা। তেমনই খেলোয়াড়দের নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। আজ থাকছে উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড লুই সুয়ারেসকে নিয়ে-
উরুগুয়ের জার্সিতে:
ম্যাচ: ৯৭
গোল: ৫০
বিশ্বকাপ ম্যাচ: ৮
বিশ্বকাপ গোল: ৫
ভালো, মন্দ ও কুৎসিত– সব রূপেরই দেখা পাওয়া যাবে তার খেলা ২০১০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে। চোখ ধাঁধানো গোলে যেমন ফুটবলপ্রেমীদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তেমনি বিতর্কিত ঘটনায় শুনেছেন দুয়ো। আরেকটি বিশ্বকাপের আগে তাই লুই সুয়ারেসকে নিয়ে অন্যরকম আলোচনা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক!
যদিও তার সুযোগ খুব বেশি হয়তো নেই। কারণ তিনি এখন অনেক বেশি পরিণত, বার্সেলোনায় বিশ্বসেরা সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করায় মানসিকভাবেও আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে। বিশেষ করে ২০১৪ বিশ্বকাপের কামড়-কাণ্ডের পর নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়েছেন উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড।
এরপরও বিশ্বকাপে যখন খেলতে নামছেন, তখন অতীতের ঘটনাগুলো সামনে আসতে বাধ্য। ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করে উরুগুয়েকে তুললেন কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে ঘানাকে আটকে দিতে নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন গোলরক্ষকের ভূমিকায়! বল জালে জড়াতে যাচ্ছে দেখে গোল লাইন থেকে হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে মাঠ ছাড়েন লাল কার্ড দেখে।
তবে ২০১৪ বিশ্বকাপে যা করেছেন, তা ছাড়িয়ে গেছে আগের সবকিছুকে। ২৭ বছর বয়সে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে নেমে নাতালের ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে ইতালির ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েল্লিনিকে কামড় মেরে বসেন তিনি! ফলাফল, লম্বা সময়ের জন্য ফুটবল থেকে নির্বাসিত। এমনকি স্টেডিয়ামে ঢোকারও অনুমতি ছিল না তার। ওই নিষেধাজ্ঞার সময়েই ‘ত্রাতা’ হয়ে পাশে দাঁড়ায় বার্সেলোনা। কামড়-কাণ্ড ও নিষিদ্ধ হওয়ার পরও মোটা অঙ্কের ইউরো খরচ করে লিভারপুল থেকে উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ডকে কিনে আনে কাতালানরা।
ন্যু ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার পর সুয়ারেস এখন অনেক বেশি পরিণত। কঠিন জায়গা থেকে বেরিয়ে ফিরে আসেন আগের ছন্দে। নিষেধাজ্ঞার কারণে শুরুতে উরুগুয়ের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে না পারলেও পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন লাতিন দেশটির সরাসরি রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিতের পথে। বাছাইয়ের ১৩ ম্যাচে ৫বার লক্ষ্যভেদ করেছেন বার্সেলোনা তারকা।
যে কোনও দলের যতই ভালো মাঝমাঠ ও রক্ষণ জমাট হোক না কেন, যদি ফিনিশার ভালো মানের না থাকে, তাহলে কোনও কাজেই আসে না। উরুগুয়ের অন্তত এই সমস্যা নেই। আক্রমণভাগে সুয়ারেসের সঙ্গে রয়েছেন এদিনসন কাভানির মতো বিশ্বমানের স্ট্রইকার। দুজন দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে খেলেন বলে বোঝাপড়াটাও দুর্দান্ত। দুজনের পজিশন এক হলেও জাতীয় দলে ঠিকই মানিয়ে নেন দারুণভাবে।
গোলের জন্য সবসময় ওত পেতে থাকেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। প্রতিপক্ষের রক্ষণের সামান্য ভুলের ফায়দা তুলে নিতে তিনি ওস্তাদ। গোল করাটা প্রধান কাজ হলেও সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতেও পারদর্শী। বার্সেলোনায় দৃশ্যটা দেখা যায় প্রতিনিয়ত। তাছাড়া রক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি। সুয়ারেসের কাছে উরুগুইয়ানদের প্রত্যাশা তাই আকাশ ছুঁয়েছে। অতীতের বিতর্ক মাটি চাপা দিতে নিজের জন্যও তো চমৎকার একটি বিশ্বকাপ চাই সাবেক লিভারপুল তারকার।
ক্লাব ফুটবলে দারুণ এক মৌসুম পার করেছেন সুয়ারেস। মৌসুমের প্রথম অর্ধটা খুব একটা ভালো না কাটলেও শেষটা রাঙিয়ে নিয়েছেন নিজের মতো করে। কাতালানদের জার্সিতে লা লিগা ও কোপা দেল রে জেতার পথে ৫১ ম্যাচে করেছেন ৩১ গোল।
এই সাফল্য সঙ্গী করেই সুয়ারেস নামতে যাচ্ছেন বিশ্বকাপে, যেখানে প্রশংসা ও নিন্দা দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি!
একনজরে:
পুরো নাম: লুইস আলবের্তো সুয়ারেস দিয়াস
জন্ম: ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৭ (৩১ বছর)
পজিশন: ফরোয়ার্ড
ক্লাব: বার্সেলোনা
উচ্চতা: ৬ ফুট