ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন নিধনাঞ্চলে নৌ ও স্থলপথে যাত্রা এবং পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে রাজধানীর সদরঘাট থেকে চাঁদপুর ও সতীর্থ দক্ষিণাঞ্চলের সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর নির্দেশনায়। একইসঙ্গে দেশের অন্যান্য নদীবন্দরেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধের কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন, বিশেষ করে যারা কর্মস্থল বা আনা-নেয়ার জন্য এই পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়াশার ঘনঘটা দৃশ্যমানতা কমিয়ে দেয়। গত শনিবার রাত ১টা থেকে রোববার ভোর ৬টার মধ্যে পরিকল্পিত ছয়টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঢাকায় সময় মতো অবতরণ করতে পারেনি। রানওয়ে পরিষ্কার না থাকায় অধিকাংশ ফ্লাইটই আকাশে চক্কর কাটতে করতে অপেক্ষা করতে বাধ্য হয় এবং পরে দেরিতে অবতরণ করে। কিছু ফ্লাইট কুয়াশার পূর্বাভাস পেয়ে নির্ধারিত সময়ের পরে ঢাকায় রওনা হয়েছে।
ঘন কুয়াশার কারণে আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে প্রায় ১১ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল, যা রোববার সকালের কিছুটা সূচনার মাধ্যমে আবার স্বাভাবিক হয়। বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ জানান, পদ্মা নদীতে তীব্র কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে এই সময়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল।
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মুহম্মদ মোবারক হোসেনের মতে, সন্ধ্যার পর প্রায় পুরো বুড়িগঙ্গা নদীতেই কিছু দেখা যাচ্ছে না। বড় নদীগুলোর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। কুয়াশা না কাটে লঞ্চ চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন। এর আগে, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়, সেই দুর্ঘটনার পরে নৌপথে সতর্কতা আরও বাড়ানো হয়েছে।
অপরদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল দেশের সবার সবচেয়ে কম তাপমাত্রা নিকলীতে ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীর ডিমলা, শ্রীমঙ্গল ও অন্যান্য মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে অবস্থান করছে। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৩ ডিগ্রি। সিনিয়র পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, তাপমাত্রা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে, ফলে শীতও আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে এবং সামনে আরও তাপমাত্রা কমার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া ভবিষ্যদ্বানী করছেন যে, এই শীতপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে পারে, যা জনজীবনে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, যেমন-বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জের চলনবিল, ও অন্যান্য অঞ্চলে শীতের কারণে জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত হচ্ছে। দিনমজুর ও শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন, অনেক এলাকায় ধান রোপার কাজ বন্ধ। অন্যদিকে, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হকার্স মার্কেট ও ফুটপাথের দোকানগুলো গরম কাপড়ে সরগরম হয়ে উঠছে। লেপ-তোশক তৈরির কারখানাগুলির ব্যস্ততা বেড়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ এখন গরম কাপড়ের জন্য ছুটছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে জনজীবনে এই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে কর্তৃপক্ষ।

