শুরু হয়ে গেছে বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞ। ২১তম বিশ্বকাপের আসরে স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হয় সৌদি আরব। আয়োজক রাশিয়া ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সৌদিকে। মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হয়। ম্যাচের বিরতির আগে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় রাশানরা। একটি করে গোল করেন উইরি গাসিস্কিয়ি এবং ডেনিস চেরিশেভ। বিরতির পর একটি করে গোল করেন আরতেম জিউবা, চেরিশেভ, গোলভিন।
রাশিয়া বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে ইতিহাসে ঢুকে যায় মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়াম। ২১তম বিশ্বকাপের আসর দিয়েই বিশ্বকাপে প্রথম ভিডিও রেফারি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক দেশের পরাজয়ের কোনো ইতিহাস ছিল না। এর আগে উদ্বোধনী ম্যাচে ৯ বার খেলেছে স্বাগতিক দেশ। তাতে ৬ বার জয় আর ৩টি ম্যাচে ড্র করে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা। রাশিয়া সেই ধারাবাহিকত ধরে রাখলো। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো সৌদি ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া)। সেই ম্যাচটি ড্র হয়েছিল।
শুরু থেকেই সৌদিকে চেপে ধরে রাশিয়ানরা। খুব দ্রুত লিডও নেয় তারা। স্বাগতিকরা ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। রাশিয়ানদের তারকা উইরি গাসিস্কিয়ি গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। ২২ বছর বসয়ী সিএসকেএ মস্কোতে খেলা আলেকজান্ডার গোলভিনের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করেন ২৮ বছর বয়সী তারকা মিডফিল্ডার গাসিক্সিয়ি। ১৫ মিনিটের মাথায় আবারো গোলের সুযোগ পেয়েছিল স্বাগতিকরা। জাগোভ আর স্মোলোভের দারুণ কম্বিনেশন সৌদির জালে বল জড়াতে পারেনি।
২১ মিনিটের মাথায় সুযোগ তৈরি করেছিল সৌদি। ৩১ বছর বয়সী অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার আল সালাউয়ি গোলবারের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন। ৩৭ মিনিটের মাথায় আবারো আক্রমণে যায় রাশিয়া। নিজেদের ডি-বক্সে ঝুঁকিয়ে নিয়ে বল ক্লিয়ার করেন ওসামা হাসাউয়ি। পেনাল্টির আবেদন করেও হতাশ হতে হয় রাশানদের। ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে সৌদির রক্ষণকে চূর্ণ করে দ্বিতীয় গোল করেন ডেনিস চেরিশেভ (২-০)। ২৭ বছর বয়সী ভিয়ারিয়ালে খেলা এই তারকা মিডফিল্ডার পাঁচ ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে সৌদির বক্স থেকেই গোল করেন। চেরিশেভকে বল বানিয়ে দেন ২৪ বছর বয়সী তরুণ মিডফিল্ডার রোমান জোবনিন।
এই গোলের মধ্যদিয়ে দারুণ এক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন চেরিশেভ। ম্যাচের ২৪তম মিনিটে জাগোয়েভ আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়লে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামেন চেরিশেভ। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথম কোনো বদলি খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার নতুন নজির গড়েন তিনি।
বিরতির পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় সৌদি। ম্যাচের ৫২, ৫৬ আর ৫৮ মিনিটে তিনবার রাশিয়ান রক্ষণে হামলা চালায় তারা। তবে, কোনোটিতেই সফল হতে পারেনি ফিনিশিংয়ের অভাবে। তবে, পুরো মাঠে দুর্দান্ত খেলা গোলভিনের অ্যাসিস্ট থেকে তৃতীয় গোলের দেখা পায় রাশিয়ানরা। ম্যাচের ৭১ মিনিটের মাথায় গোলভিনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে হেড করেন ২৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড আরতেম জিউবা। লাফিয়ে উঠা বল গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে সৌদির জালে জড়ালে স্বাগতিকরা ৩-০’তে লিড নেয়।
এই গোলের মধ্যদিয়ে আরেকটি বিশ্ব রেকর্ডের জন্ম দেন জিউবা। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে ৮৯ সেকেন্ডের মাথায় গোলটি করেন জিউবা। এর আগে ২০০২ সালে আমেরিকার বিপক্ষে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে পোল্যান্ডের মারচিন ৬৪ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে আরেকটি গোল করেন চেরিশেভ। এই গোলে ৪-০’তে এগিয়ে যায় রাশানরা। অতিরিক্ত সময়ে আরও একটি গোল করে রাশিয়া। দলের পঞ্চম গোলটি করেন দুর্দান্ত খেলা গোলভিন (৫-০)। বল পজিশনে ৬১ শতাংশ নিজেদের পায়ে বল রাখলেও এই স্কোরে হার মানতে হয় সৌদিকে। আর ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে এই স্কোরে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রাশিয়া।